রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে ভূমিকা রাখার আশ্বাস দিয়েছে চীন।শুক্রবার ঢাকায় দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এই আশ্বাস আসে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন।সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই বৈঠকে চীনের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর ঝাও কেঝি। সকাল সাড়ে ৯টায় চীনের মন্ত্রী সচিবালয়ে উপস্থিত হলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাঙ্গণে অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে পুলিশের একটি দলের সালাম নেন ঝাও কেঝি। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অধীন বিভিন্ন সংস্থা প্রধানরা অংশ নেন। চীনের পক্ষে দেশটির ২৪ জনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন।

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে চীনতে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়।তারা আশ্বাস দিয়েছেন, তারা ফিল করছেন যে এটা তাড়াতাড়ি সলভড হবে, বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল।মিয়ানমারে দমন-পীড়নের মুখে গত বছরের অগাস্টের পর থেকে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে থেকে বাংলাদেশে রয়েছে আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা।এই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও তাদের সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না। মিয়ানমারের উপর চাপ বাড়াতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।চীনের জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন, সেখানেও রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি আসে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও চীনের পক্ষ থেকে গঠনমূলক ভূমিকা রাখার প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয় বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ যে ‘ভিকটিম’ হয়েছে, তা চীন উপলব্ধি করছে। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসাও করেছে তারা। বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ ও সাইবার অপরাধ দমন নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম দমনে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে।চীন ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আশা দিয়েছে বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।াংলাদেশের নাগরিকদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চীনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঝাও কেঝি। সময়ের অভাবে কোনো বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বা ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে যেতে না পারলে, চীন সরকার এই ভিসা দেবে।

চীনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তিন দিনের বাংলাদেশ সফরের আজ দ্বিতীয় দিনে সচিবালয়ে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়। পরে চীনের ২৪ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করে আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। সভা শেষে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল চীনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন আশ্বাসের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান।আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, আমাদের কাউন্টার টেররিজম এবং আমরা যে সমস্ত ইকুইপমেন্ট, আমাদের পুলিশ যেগুলো ফেস করতেছে, যেগুলো প্রয়োজন সেগুলো তারা সহযোগিতা করবে। সকল নাগরিককে অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়ার কথা বলে গেছেন। আমাদের ট্যুরিস্ট, আমাদের ব্যবসায়ী যদি সময়ের অভাবে ভিসা না নিয়ে যেতে পারেন, তাহলে সেখানে গেলে তারা অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেবেন।

এ বিষয়ে শিগগিরই চীনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত ঘোষণা দেওয়া হবে বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান। তবে চীনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,‘কথা হয়েছে, মিয়ানমার সিটিজেনদের কত তাড়াতাড়ি নিয়ে যাবে। রিকোয়েস্ট করেছি, তাঁরা যেন একটা ভূমিকা রাখে। এবং তাঁরা আমাদের সঙ্গে এগ্রি করেছেন। তাঁরা মনে করেন, এরা খুব শিগগিরই ফিরে যাবে। এবং তাঁরা এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছেন। বাংলাদেশ যে অসুবিধায় পড়েছে, তাঁরা ফিল করছেন।

এ ছাড়া আজকের বৈঠকে জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিতে চীনের সঙ্গে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে জঙ্গি, সন্ত্রাস ও সাইবার ক্রাইম দমন এবং মাদক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশকে প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সহযোগিতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।এ ছাড়া বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্র“প গঠন এবং পুলিশের জন্য সরঞ্জাম সহায়তা দেওয়ার বিষয়েও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগকারীসহ নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আগামীতে তাঁর দেশ বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগ করবে বলেও আশ্বাস জানান তিনি।