তেজগাঁও বিমানবন্দর যেন বেহাত না হয়, সেজন্য বিমান বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শনিবার সকালে তেজগাঁও বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর এয়ার মুভমন্টে ফ্লাইটের নতুন ভিভিআইপি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করে তিনি বলেছেন, এই এয়ারপোর্ট কোনো দিনই বন্ধ হবে না। এটা বিমান বাহিনীর, বিমান বাহিনীরই থাকবে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪০ এর দেশকে তখনকার ব্রিটিশ সরকার তেজগাঁও বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করে। ১৯৪৫ সালে বিশ্বযুদ্ধ শেষে এটি বেসামরিক বিমানবন্দরে হিসেবে চালু হয়। ১৯৮১ সালে নতুন বিমানবন্দর চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত তেজগাঁও বিমানবন্দরই ছিল দেশের প্রধান বিমানবন্দর। বর্তমানে এ বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এটুকু সতর্ক করতে চাই যে, এটার ওপর অনেকের কিন্তু শ্যেন দৃষ্টি আছে। এটা যেন বেহাত না হয়, বিমান বাহিনী এটাকে সেভাবে ব্যবহার করবে।এটার আশপাশে উঁচু উঁচু বিল্ডিং বানাতে হবে- এই চিন্তা যেন সকলের মাথা থেকে চলে যায়।

বর্তমানে বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনী তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে তাদের হেলিকপ্টার, প্রশিক্ষণ বিমান, জেট বিমান ও বৃহদাকার পরিবহন বিমান পরিচালনা করে থাকে। এ ছাড়া এখান থেকে জরুরি ত্রাণসামগ্রী বহনের জন্য বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বারবার বিমান বাহিনীকে সতর্ক করেছি, এই জায়গা নেওয়ার জন্য সকলে কিন্তু হাত বাড়িয়ে বসে আছে। আমি যতদিন ক্ষমতায় আছি, আমি দেবই না।এ বিমানবন্দরের ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কখনো যেনো এটা নিতে না পারে, সেজন্য এটার ব্যবহার বাড়াত হবে। মাঝে মাঝে এখান থেকে প্লেন চালাতে হবে। যেন সকলে জানে, এটা ব্যবহার হচ্ছে। আমি যখন থাকব না, তখন এসে নিয়ে যাবার চেষ্টা করবে।ঢাকার মত শহরে দ্বিতীয় একটি বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই না যে এয়ারপোর্টটা নষ্ট হোক। ঢাকা শহরে আরেকটা এয়ারপোর্ট আমাদের একান্তভাবে দরকার। যেহেতু এটা আমাদের জন্য তৈরি করা আছেই; কেন আমরা এটাকে নষ্ট করব।

বিমান বাহিনীর জন্য আরও জায়গা দরকার মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান বাহিনীর কলবের বৃদ্ধি করছি। আমরা ছোট দেশ। কিন্তু আমাদের কিছুই থাকবে না- এটা তো হতে পারে না। কারও দিকে তাকিয়ে তো বসে থাকব না।প্রধানমন্ত্রী তেজগাঁও বিমানবন্দরের নতুন ভিভিআইপি কমপ্লেক্স উদ্বোধন করার সময় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, তিন বাহিনী প্রধান এবং বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।প্রধানমন্ত্রী তার শৈশবরে কথা স্মরণ করে অনুষ্ঠানে বলেন, এটাকে তখন তেজগাঁও অ্যারোড্রাম বলা হত। ১৯৫৬ সালে প্রথম প্লেনে চড়েছিলাম। আমার চাচার সাথে এখান থেকে খুলনা গিয়েছিলাম। ১৯৬৯ সালে এখান থেকেই করাচি, সেখান থেকে ভিসা নিয়ে ইতালি যাই, আমার স্বামীর কর্মস্থলে।১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এ বিমানবন্দরকে বিমান বাহিনীর হাতে তুলে দেয়।

কিন্তু বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ আসার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে কর্ম কমিশনের অফিস করে দেওয়া হয়। নানা জায়গা থেকে চাপ আসতে থাকে,‘এই বিমানবন্দর রাখার দরকার কী?’ এই বিমানবন্দর যখন বিমানবাহিনীর হাতে তুলে দিই; তখনও আপত্তি ছিল।প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিমানবন্দর থাকলে আশপাশে উঁচু দালান করা যায় না, সেজন্য এটা বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। মেট্রোরেলের যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়, এমনভাবে করা হয়েছিল, যেন এই বিমানবন্দর চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।তখনকার বিমান বাহিনী প্রধানের সহায়তায়’ মেট্রোরেলের পথ পরিবর্তন করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখান থেকে গেলে ২২টি বিল্ডিং ভাঙতে হত।প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে কেক কাটেন এবং দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন। তিনি সেখানে একটি গাছের চারা রোপণ করেন এবং কমপ্লেক্সের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। পরে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকেই হেলিকপ্টারে চড়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে রওনা হন শেখ হাসিনা।