স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, আমি বিএনপি’র উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনারা নির্বাচনে আসুন। নির্বাচনের বিকল্প কিছু নেই। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়েই নির্বাচন হবে, নির্বাচনের কোন বিকল্প হতে পারে না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবেই আমাদের দেশেও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে আগামীতে তাদেরকে বাটি চালান দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলার মাটি থেকে তারা হারিয়ে যাবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম শনিবার বিকেলে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন নার্সিং কলেজ-এর নব নির্মিত ভবন ও এর কার্যক্রম উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী যুক্ত ফ্রন্টের ৭ দফা দাবী ও আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, তাদের দাবী অযৌক্তিক ও অকার্যকর। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ক’দিন বাকী আছে। ক’দিন পরেই নির্বাচনের ঢোল বাজতে শুরু করবে। এখন নির্বাচনের সময়, জনগণ ভোট দিয়ে তাদের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। জনগণ তাদের সরকার বেছে নিবে। তাই এসব দফা বাদ দিয়ে সবাই নির্বাচনে আসুন।

মন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তরুণ ব্যারিষ্টার ড. কামালকে ভালবাসতেন, তাকে তিনি ¯েœহ করতেন। ড. কামালকে ডেকে এনে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বানিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেওয়া আসনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় তাকে এমপি বানিয়েছিলেন। কিন্তু আজ কষ্ট পাই যখন দেখি সেই ড. কামাল সাহেব বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পক্ষ অবলম্বন করে তাদের পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন। দূঃখ লাগে যখন দেখি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা জামাত-বিএনপির সঙ্গে একই মঞ্চে দাড়িয়ে ড. কামাল বক্তব্য রাখছেন। তিনি শেষ বয়সে এসে আজ বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে বাংলার মানুষ এ বেঈমানীর জবাব দিবে, ইনশাআল্লাহ।

গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব বদরুন নেছা, নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তন্দ্রা শিকদার, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমএ মোহী, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর ও পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান লস্কর মিঠু এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সালাম সরকার প্রমূখ।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী নাসিম আরো বলেন, বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ সহ জাতীয় চার নেতা বঙ্গবন্ধু’র বিশ^স্ত সহচর ও বন্ধু ছিল। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন আওয়ামীলীগের দুঃসময়ে হাল ধরেছিলেন। বঙ্গতাজের সহধর্মীনী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের নামে নাসিং কলেজের নাম করণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। অনেকে আইনের শাসনের কথা বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধিনতার কথা বলেন। কিন্তু মোস্তাক-জিয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারী করে হত্যার বিচার বন্ধ করেছিল। ২১ বছর পিতা হত্যার বিচার পাইনি। মামলা করতেও সাহস পাইনি। তখন কোথায় ছিল বিচার, কোথায় ছিল আইনের শাসন ? শুনেছি কাপাসিয়ায় নতুন নতুন নেতার আবির্ভাব হয়েছে। হঠাৎ করে আসা নেতারা কি করবে ? তাজউদ্দীনের সন্তান রিমি-সোহেল থাকতে কাপাসিয়ায় আর কোন নেতার প্রয়োজন নেই। তাদের পিছনে আমি আছি, শেখ হাসিনাও ওদের সঙ্গে আছে। তিনি আগামী নির্বাচনে সিমিন হোসেন রিমিকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে কাপাসিয়ার উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার আহবান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে সিমিন হোসেন রিমি বলেন, আমরা কাপাসিয়ায় মানবিক সমাজ গড়তে চাই। যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই। সাহস করে বলতে চাই আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান দূর্নীতিমুক্ত। মানুষকে কষ্ট দেয়াও দূর্নীতি। মানুষের সাথে অন্যায় আচরন করাও দূর্নীতি। আমরা সকল মানুষের জন্য দূর্নীতিমুক্ত নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে চাই। তিনি কাপাসিয়ার উন্নয়নের ফিরিস্থি তুলে ধরে বলেন, কাপাসিয়ার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যুতের গ্রাহক ১৮ হাজার থেকে ৮২ হাজার হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রাহকের সংখ্যা ৯২ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ বলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আমরা উৎসব করব। উদ্বোধনী মঞ্চে উপবিষ্ট সাংসদ, অতিরিক্ত সচিব, মহাপরিচালক, পুলিশ সুপার, ইউএনও সকলেই নারী। নারী পুরুষের সমতায় এটা শেখ হাসিনার অবদান।

পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নার্সিং কলেজ-এর নব নির্মিত ভবন ও এর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন এবং পরিদর্শণ করেন।

উল্লেখ, সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন নাসিং কলেজটি নিমার্ণ করতে ব্যয় হয়েছে ২২ কোটি ৩৩ লাখ ৫২ হাজার। নিমার্ণ কাজটি গত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন, ২তলা হোষ্টেল বিল্ডিং, ২তলা গ্যারেজ কাম ড্রাইভার কোয়াটার এবং একটি সাবষ্টেশনের কাজ সম্পন্ন করে ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কলেজের সেশন থাকবে ৪টি, প্রতি সেশনে ১০০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সুযোগ থাকবে। এখানে বিএসসি ইন নার্সিং ডিগ্রী কোর্স চালু করা হচ্ছে বলে বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. আবদুস সালাম সরকার জানান, এটি বাংলাদেশের চতুর্থতম সরকারি নার্র্সিং ইনস্টিটিউট। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে পদবী ভিত্তিক কর্মরত নার্সগণ উন্নত পেশাগত প্রশিক্ষণে অংশগ্রহন করতে এ ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে পারবেন। এছাড়া মোট আসনের পাঁচভাগ নার্সিং ডিপ্লোমাধারী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্ধ থাকবে। আগামী ২০১৮/১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে পঠন পাঠন কার্যক্রম চলবে।

নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ মধুসুদন চক্রবর্তী বলেন, এ ইনস্টিটিউটে প্রতি শিক্ষা বর্ষে একশ ২০টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। একজন অধ্যক্ষসহ মোট পাঁচজন শিক্ষক পাঠদান কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন। ২০১৮-২০১৯ শিক্ষা বর্ষ (জানুয়ারি-২০১৯) থেকে ওই কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।