বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পণ্যের নতুন বাজার অনুসন্ধান ও বৈচিত্র্য বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাতে মুষ্টিমেয় কয়েকটি পণ্যের ওপর রপ্তানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশ রপ্তানি বহুমুখীকরণের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের রপ্তানি পণ্যগুলোর বিচিত্রতা বাড়াতে হবে, আপনাদের ভাবতে হবে রপ্তানি পণ্যে আপনি কতটুকু বৈচিত্র্য আনতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের সমর্থন বাড়ানোর আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত গন্তব্য বাংলাদেশ : বৃদ্ধি ও উন্নয়নের প্রবেশপথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে উদ্বোধনকালে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ৬০ বছর বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শিল্পের বহুমুখীকরণ করতে চাই। কোন অঞ্চলে কোন পণ্যের উৎপাদন বেশি, কী ধরনের বাজার চাহিদা আছে দেশে-বিদেশে সেটা বিবেচনায় নিয়েই আমাদের শিল্পায়ন করতে হবে, উৎপাদন করতে হবে।ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের রপ্তানি পণ্যটা বহুমূখীকরণ করা এবং কতটা ভিন্নতা আনতে পারেন সেই চিন্তাটা করতে পারেন। আর বিশ্বের চাহিদাটা কি? শুধু একটা দুটো দেশের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। আমাদের সবদিকেই দেখতে হবে. কোন দেশে কী চাহিদা আছে আর বাংলাদেশ কী যোগান দিতে পারে।গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ (৩৬.৬৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করে। এর মধ্যে ৩০ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে ৩৯ বিলিয়ন (৩ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি।রপ্তানি আয় ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যা যা করণীয় আমরা তা করব।

বর্তমান সরকারের সময় মাথাপিছু আয়, বাজেট ও প্রবৃদ্ধি বাড়ার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা অনুষ্ঠানে বলেন শেখ হাসিনা।তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বিনিয়োগ সহজ করার জন্য এককভাবে, পিপিপি, সরকার ও সরকারের মধ্যে বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়ার কথাও বলেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীদের যখনই যে সমস্যা নিয়ে এসেছেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সমাধান করে দেবার চেষ্টা করছি।আমরা বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়ন করার জন্য বিডার অধীনে ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন পাস করে দিয়েছি। আইন পাস করলেও অনেক সময় বিডাকে একটু সমস্যায় পড়তে হয়। তবে সমস্যাটা কি সেটাও আমরা জানার চেষ্টা করছি, সঙ্গে সঙ্গে সমাধানের চেষ্টা করছি। শেখ হাসিনা তার সরকারের সময়ে উন্নয়নের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমরা এখন ক্ষমতায় আছি। আগামীতে নির্বাচন। বাংলাদেশের মানুষ যদি ভোট দেয় তাহলে আমরা আমাদের এই লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে পারব। আমরা আমাদের কাজগুলো করতে পারব।আর যদি না দেয়, হ্যাঁ সবসময় প্রচেষ্টা থাকবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। তারপরে কি হবে সেটা বলতে পারি না। কারণ আমাদের অভিজ্ঞতাটা খুব তিক্ত। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল, তখনো বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছিল, সাক্ষরতার হার বেড়েছিল। বাংলাদেশ উদ্বৃত্ব খাদ্যের দেশ হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, যখন সাত বছর পরে আবার সরকার গঠন করলাম তখন দেখলাম সবকিছু আবার পিছিয়ে গেছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমাবাজি, গ্রেনেড হামলা, চাঁদাবাজিৃ। দুইটা সরকার একটা হাওয়া ভবন, একটা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর। খুশি না করলে ব্যবসা করা যায় না। এইরকম একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। ধীরে ধীরে আমরা সবকিছু আবার শৃঙ্খলায় নিয়ে আসি। সবকিছু যেন পরিকল্পিতভাবে এগোতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান প্রাইজওয়াটারহাউজকুপারস বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে বিবেচনা করছে। তাদের পূর্বাভাস ঠিক হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ২৮তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আর ২০৫০ সালের মধ্যে নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার মত দেশকে অতিক্রম করে বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতিদে পরিণত হবে বাংলাদেশ।আমি চাই, আপনারা অন্তত এটা মাথায় রেখে আপনাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজ করবেন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম খানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফালে আহমেদ, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বক্তব্য দেন।