জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা অর্থাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার অপর তিন আসামি হারিজ চৌধুরী, জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানেরও একই দণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। ওইদিন থেকেই কারাবন্দী আছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। আজ সোমবার পুরাতন ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত চলা বিচার শেষে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। এ ছাড়া রায়ে জিয়া চ্যারিটেবলের নামে কাকরাইলে ক্রয়কৃত ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলামকে আদালত উপস্থিত করা হয়। তবে খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন থাকায় অনুপস্থিত ছিলেন। অপর আসামি হারিজ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন।

২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাবন্দী অবস্থায় খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠনের অনুরোধ জানিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিঠি পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে তাকে গত ৬ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর কেবিন ব্লকে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চার আসামিকে দেওয়া সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডের রায়কে একতরফা রায় বলে মন্তব্য করেছেন তার আইনজীবী মো. সানাউল্লাহ্ মিয়া। কারাভ্যন্তরে স্থাপিত আদালতে রায় ঘোষণার পর আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষে গণমাধ্যমকে তিনি এ মন্তব্য করেন।সানাউল্লাহ্ মিয়া বলেন, ‘এগুলো সব একতরফা রায়। এই এক তরফা রায়ের বিষয়ে কী করবে না করবে সে বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবীরা সিদ্ধান্ত নেবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা (জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা) প্রাইভেট ট্রাস্ট। এখানে সরকারের কোনো টাকা নেই, এটা মামলাই হয় না। আজকে জোর করে সাজা দেওয়া হয়েছে। সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে এই সাজা। এর বাইরে এ মূহূর্তে আমরা কিছু বলতে পারব না।’

এই সাজার বিষয়ে আপিল করা হবে কিনা জানতে চাইলে সানাউল্লাহ্ মিয়া বলেন, ‘সেটা এ মূহূর্তে বলতে পারব না। রায় হাতে পাইনি এখনও। রায় পাওয়ার পর এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবীরা সিদ্ধান্ত নেবেন।’

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাত বছরের কারাদণ্ডের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আগামীকাল মঙ্গলবার সারা দেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এই রায়ের প্রতিবাদে আগামীকাল সারা দেশের জেলা সদরগুলোতে এবং মহানগরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা করছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মানুষ কখনই তা মেনে নেবে না। অতীতেও মেনে নেয়নি। এখনও তা মেনে নেবে না। জনগণ তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে তাদের এ ধরনের নীলনকশার চক্রান্ত প্রতিহত করবে।’ বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘তথাকথিত প্রধানমন্ত্রী, যিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি, তিনি হেলিকপ্টারে জনসভা করে বেড়াচ্ছেন। নৌকার জন্য ভোট করছেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে। রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে কখনোই একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না।’