ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ দুটি একসূত্রে গাঁথা ।বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা ।এখানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বাংলদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।তাই ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যা থাকার মানে পুরো দেশটি সমস্যাগ্রস্ত হওয়া ।কারণ শরীরের একটি অঙ্গ রোগাক্রান্ত হলে শরীরের অন্যান্য স্থানে এর প্রভাব পড়বে এটি স্বাভাবিক ।আমি এখন শুধুমাত্র ক্যাম্পাস থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাকে তুলে ধরছি ,যা পড়াশুনায় বিঘ্নতা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করছে যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সাথে একদম ই বেমানান এবং হুমকিস্বরূপ ।কেননা পড়াশুনার পরিবেশ ঠিক না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং এ পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হবে|

প্রথমে আসি বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রাম এবং গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসকে ধারন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে থাকা ভাস্কর্যগুলো এবং শহীদ মিনারের প্রতি।বিস্মিত হওয়ার বিষয় এটি যে এ গুলোর উপর বর্তমানে কুকুর ঘুমিয়ে থাকে ।যা বাঙালী হিসেবে খুবই লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উল্টোপথে গাড়ি চালানো একটি অন্যতম সমস্যা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্য থেকে যেসকল রাস্তা রয়েছে তার বেশির ভাগেই উল্টোপথে গাড়ি চালানো হয় । নিজের সাইটে জ্যাম থাকলে চালকদের একটুও বাঁধে না রং সাইট দিয়ে চলাচল করতে।গাড়ির গতিও থাকে নিয়ন্ত্রণহীন ।বিশেষ করে মঠরসাইকেল,কার,লেগুনা,সিএনজি গুলোর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কোনো কর্মসূচি থাকলে আগত লোকসকল সবাই একবারের জন্য হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ এবং পুরো ক্যাম্পাসকে যত্রতত্র ময়লা ফেলে নোংরা করে ফেলেন।

শিক্ষার্থীরা যেসব স্থানে বেশির ভাগ সময় চলাফেরা করেন ,বসেন,আড্ডা দেন সেসব এলাকার ম্যানহোলগুলোর ঢাকনা নেই ।বিশেষ করে ডাকসু এবং লাইব্রেরীর পাশে (মসজিদের পাশের দিকটাতে) দুগর্ন্ধে ভিড়া যায় না।এছাড়া ও রেজিষ্টার বিল্ডিং এর ক্যান্টিন এর সকল নোংরা পানি যে ড্রেনে নামে তার বিপরীত পাশেই মহসিন হল ,এত দুর্গন্ধ যে এখান থেকে হাঁটা খুবই কষ্টকর ।মহসিন হলের গেটে ছাত্ররা বের হলেই এর দুর্গন্ধে অতিষ্ট হয়ে পড়েন ।তাছাড়া ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তূপ রাখা হয় কোনো ডাসটবিন ছাড়াই।ভিসি চত্বরের কাছের মোড়টির (শিক্ষক ক্লাবের বিপরীতে) একটি রেইন্ট্রি গাছের গোঁড়ায় পঁচা-দুগর্ন্ধ ময়লার স্তূপ রাখা হয়। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়না ।একদিকে যেমন এর মাধ্যমে মশার উপদ্রপ বৃদ্ধি পাচ্ছে ,ওপর দিকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

ক্যাম্পাসে যে দোকানগুলো রয়েছে কেউ যখন খাবার খেতে বসে পথশিশুরা এসে খাবার ছিনিয়ে নিতে চায় কিংবা গায়ের উপর ঝুলে পড়ে,হাতের উপর ঝুলে পড়ে জোর করে টাকা আদায় করে ।ওদের কাছ থেকে চকলেট বা ফুল কিনতে না চাইলেও ঝোর করে বিক্রি করে নতুবা টাকা আদায় করে নেয় ।অনেক সামর্থ্যবান-শক্তিবল থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষা আদায় করে।বারবার হাত বাড়িয়ে দেয় ,গায়ে খোটা দেয় ভিক্ষা পেতে ফলে দিতে বাধ্য হতে হয়।এমনও লক্ষ্য করে দেখেছি ল্যবরেটরি স্কুল এ্যান্ড কলেজের পাশে একই সাইনবোর্ড লাগিয়ে দুজন বসে ভিক্ষার থালা নিয়ে একজন বিকেলে ,একজন সকালে এভাবে ভাগ ভাগ করে একই স্থানে,একই কারণ দেখিয়ে ।

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন এবং মাদক বিক্রির ও ঘটনা ঘটে ।বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে ।মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করার পরও বন্ধ হয়নি । বৃষ্টি হলে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা সাগরে পরিণত হয়, পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার ফলে।গুরুদুয়ারার সামনের রাস্তা থেকে বেশ কিছু জায়গা উল্লেখ্যযোগ্য ।

ক্লাস চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন দলের স্বজোরে মিছিলের কারনে শিক্ষার্থীরা মনোযোগী হয়ে ক্লাস করতে পারে না ।এমনকি শিক্ষকরা ক্লাস নিতে না পেরে জানালার ফাঁক দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মিছিল দেখেন।কোনো কোনো দল তাদের সদস্য সংখ্যা কম হওয়াতে মিছিলে দেখা যায় আবার মাইকের ব্যবহার করেন তাদের কথা সবার কানে পৌঁছানোর জন্য ।ক্লাস চলাকালীন সময়ে স্লোগানের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে রয়েছে আবার সভা সমাবেশ যেখানে ,সর্বোচ্চ সাউন্ডে মাইকের ব্যবহার করা হয়।আর এ বৈরী পরিবেশে একজন শিক্ষার্থীর ক্লাস করা এবং একজন শিক্ষকের ক্লাস নেয়া দুটিই খুবই কষ্টের ব্যাপার।বিশেষ করে কলা অনুষদ এবং সামজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের এ বিষয় গুলির বেশি সম্মূখীন হতে হয়।

ক্লাস চলাকালীন সময়ে ক্যাম্পাসের ভিতরের ছোট মাঠগুলোতে বহিরাগতরা এসে খেলাধুলা করেন ।তাও আবার অনেকগুলো পিচে বিভক্ত করেন।ফলে কে কোথা থেকে বল মারে কার গায়ে লাগে এটি বুঝার কোনো উপায় নেই।প্রায় সময়ই শিক্ষার্থীদের গায়ে বল লাগে এবং মাঠগুলোর ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় অনেক আতঙ্কের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হয়।মল চত্বর এলাকাটি এক্ষেত্রে উল্লেখ্যযোগ্য ।এছাড়া আরো একটি দুঃখের বিষয় হল মহসিন হলের মাঠটি সারাদিন বহিরাগতদের দখলে থাকে ।ঢাবির শিক্ষার্থীরা খেলার সুযোগ পাননা তাদের পুরো মাঠটি দখলের ফলে।শুধু দিনে নয় ,সারারাত তারা এখানে খেলাধুলা করে ।ফলে মাঠটি স্যার এ. এফ. রহমান হল এবং মহসিন হলের দেয়ালের পাশে হওয়ায় শিক্ষার্থীরা রাতে ঘুমাতে পারে না।  ক্যাম্পাস খোলা থাকা কালীন বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের দেখা যায় আড্ডা দিতে ।অনেক সময় অনেক কে অশ্লীল আচরণ করতেও দেখা যায়।মাসখানেক আগে টিএসসির একটি ছবি ভাইরাল হওয়াও দেখেছিলাম আমরা ।

লেখক ঃ হাসান মাহমুদ ইলিয়াস
শিক্ষার্থী,দর্শন বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,

আবাসিক শিক্ষার্থী ,স্যার এ.এফ.রহমান হল,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়