‘তাদের বলেছি, আমার বাচ্চাটা অসুস্থ। কিন্তু কেউ কথা শোনেনি। তাদের বললাম, সবার বোন-ভাগ্নি আছে। আমার বাচ্চাটার কষ্ট হচ্ছে। গাড়িটা ছেড়ে দাও। দিল না। উল্টো বলল, তোমরা বিয়ে খেতে যাচ্ছ। গাড়ি থেকেই নামতে দিল না। বলেছিলাম, হেঁটেই যাব। আমাকে নামিয়ে দাও। কিছুতেই কিছু হলো না। অ্যাম্বুলেন্সেই আমার কোলে মেয়েটি মারা গেল।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে গত রোববার মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রামে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখায় মারা যাওয়া শিশুটির মা সায়রা বেগম।

বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের আজমির গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী কুটন মিয়ার অসুস্থ মেয়েকে অ্যাম্বুলেন্সে করে গত রোববার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল। পথে শ্রমিকরা অন্তত তিনবার অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রাখে। চান্দগ্রামে প্রায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট আটকে রাখে। সেখানে অ্যাম্বুলেন্সেই শিশুটি মারা যায়। বাড়িতে মাতম চলছে। মাত্র সাত দিন বয়সী শিশুটির এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না। এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকে আসছেন ভুক্তভোগী পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে।

গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, শিশুটির মৃত্যুতে অজমির গ্রামে চলছে মাতম। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারাও তাদের বাড়িতে গিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। একই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত সবার শাস্তি দাবি করেছেন তারা।

কুটন মিয়া বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়ার পথে পুরনো বড়লেখা বাজারে ড্রাইভারের কাগজপত্র ও বাচ্চার কাগজপত্র চেক করেছে। এত অনুরোধ করলাম, ছাড়লই না। আধা ঘণ্টা পরে ছাড়ে। সেখান থেকে দাসেরবাজার গিয়ে আটকা পড়ি। গাড়ি থেকে ড্রাইভারকে টেনে নামিয়ে মারধর করল। পরে ছাড়া পেয়ে চান্দগ্রামে আবার আটকায়। অনেক অনুরোধ করলাম। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ছাড়ে।

তিনি আরও বলেন, খুব অনুরোধ করার পর ৫০০ টাকা দাবি করে। তখন পকেট থেকে ৫০০ টাকা বের করি। তারা বলে তুমি দিলে হবে না। ড্রাইভারকে দিতে হবে। ওই সময় আমার মেয়েটা মারা যায়। এরপর যখন তারা গাড়িতে এসে দেখেছে বাচ্চা মারা গেছে। তখন তারা গাড়িসহ ছেড়েছে। এই নিষ্ঠুর ঘটনার বিচার চাই। কেন ওরা এভাবে আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলল।

অ্যাম্বুলেন্স চালক শিপন আহমদ জানান, যেখানে আটকিয়েছে সেখানেই কাগজপত্র ও শিশুটির হাসপাতালের কাগজ দেখিয়েছি। তারপরও অহেতুক তারা আটকে রেখেছে। ওদের দেখলে চিনতে পারব। ওদের মধ্যে কয়েকজন সিএনজি অটোচালকও ছিল।বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ বলেন, ‘শ্রমিক আন্দোলনের নামে একটা ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াছিন আলী বিকেল সাড়ে ৪টায় বলেন, শিশুটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বাড়িতেও গিয়েছি; কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’