আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সরকারি দলের সংলাপে খোলামেলা আলোচনা হবে।মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।গত রোববার সন্ধ্যায় সংলাপ চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং সাধারণ সম্পাদক বরাবর দুটি চিঠি দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। চিঠির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য সংযুক্ত করা হয়। সংলাপের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনে ডেকেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে।ওবায়দুল কাদের বলেন, ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য আলোচনার টেবিলে তোলা হবে। আলোচনার টেবিলেই সিদ্ধান্ত হবে।

ঐক্যফ্রন্টের কিছু দাবি সংবিধান সম্মত নয়, সে ক্ষেত্রে কী হবে প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (ঐক্যফ্রন্ট) তাদের দাবিতে অটল থাকবে, না সরে আসবে, দেখেন না কী হয়!ঐক্যফ্রন্টের বাইরে এই মুহূর্তে অন্য কোনো দলের সঙ্গে সংলাপের সুযোগ নেই বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর কাউকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সঙ্গে নেবে না বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট দলটিকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণার পাঁচ বছর পর সোমবার নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।

বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেন গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন। এই জোটে বিএনপি ও গণফোরামের সঙ্গে আছে জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য।নতুন এই জোটের নেতা ও সংবিধানপ্রণেতা কামাল এরই মধ্যে বলেছেন, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুমাত্রিক সমাজ’ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাওয়াই তার লক্ষ্য। বিএনপির সঙ্গে জোট করলেও জামায়াতে ইসলামী ও তারেক রহমানের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের কোনো সম্পর্ক নেই।জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চিঠি দেন কামাল হোসেন।এই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে সংলাপে বসতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

জামায়াতের কোনো প্রতিনিধিকে ঐক্যফ্রন্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে নিলে বিষয়টি কীভাবে দেখবেন- সেই প্রশ্নে কাদের বলেন, এটা কোনো প্রকার ব্যত্যয় ঘটবে বলে আমার মনে হয়। ড. কামাল হোসেন সাহেব তো প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি তো কিছু দিন আগে বলেছেন জামায়াতের সঙ্গে আমি নেই। বলেছেন না? তিনি কি করেন দেখি।ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার দলেরও নিবন্ধন নেই বলে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর কাদের বলেন, তিনি (ড. কামাল) কাকে সঙ্গে আনবেন না আনবেন তা তার হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। খোলামেলা পরিবেশেই আলাপ-আলোচনা হবে, তা না হলে তো আমরা ডিনারের ব্যবস্থা করতাম না। খোলামেলা পরিবেশেই আমরা আলোচনা করব।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর ওবায়দুল কাদের বলছেন, সংলাপ নিয়ে এর আগে আওয়ামী লীগ নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তাদের ‘পলিসিরই’ অংশ ছিল।ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্যকে সংবিধানবিরোধী আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা এনিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই বলে গত কিছু দিন ধরে বলে আসছিলেন।

কিন্তু কামালের চিঠি পেয়ে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর কাদের বলেন, আমাদের দলের নেতারা, আমরা একই ভয়েসে কথা বলি। আমাদের পলিসি সরকার ও দলের যা ছিল তাই বলেছি। আমরা কিন্তু শিফট করিনি, শিফটের বিষয় নয়। এটা তো এমন নয় দেশে একটা প্রতিবাদের ঝড়, দেশে একটা আন্দোলনমুখর অবস্থা। এই অবস্থায় সরকার নতি স্বীকার করে সংলাপে বসেছে, বিষয়টি তা নয়।বিষয়টি হচ্ছে ড. কামাল হোসেন সাহেব ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আমাদের পার্টির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। গতকাল ক্যাবিনেট মিটিংয়ের পর অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় নেত্রী বলেছেন- আমাদের সঙ্গে কেউ দেখা করতে চান, শেখ হাসিনার দরজা তো কারো জন্য বন্ধ হয় না। আমার দরজা খোলা আছে। দেখা করতে চান, চিঠি দিয়েছেন, আমি দেখা করব।

ঐক্যফ্রন্ট থেকে ১৫ জনের মত সংলাপে অংশ নিতে চেয়েছেন জানিয়ে কাদের বলেন, আমি বলেছি চাইলে ২০/২৫ জনও আসতে পারেনন। সংলাপে কতজন আসবেন সেই তালিকা তারা আজকে (মঙ্গলবার) জানাবেন।অন্যদিকে এই সংলাপে আওয়ামী লীগের কে কে থাকবেন তা ঐক্যফ্রন্টের তালিকা পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান কাদের।সংলাপে ঐক্যফ্রন্ট তাদের ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য নিয়ে আলাপ করতে পারবে বলেও জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।তিনি বলেন, দাবি-দাওয়াগুলো এখন টেবিলে আসবে, সেখানেই আলোচনা হবে। চিঠির সঙ্গে তারা ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য সংযুক্ত করেছেন, কাজেই এটাকে আমার নাকচ করার সুযোগ নেই।

শেখ হাসিনার সঙ্গে এর আগে কোনো সংলাপ হয়নি জানিয়ে কাদের বলেন, এদিক থেকে বিষয়টি একসেপশনাল, এক্সট্রা অর্ডিনারি ডিসিশন, এটা আসলে একটা সারপ্রাইজ, প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ।বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ সংলাপে অংশ না নিলেও ঐক্যফ্রন্টের এই সংলাপ আয়োজেন সরকারের কোনো হাত নেই বলেও দাবি করেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। বাংলাদেশটা বিচিত্র দেশ। এখানে রাজনীতির যে কত ধারা, উপধারা, শাখা-প্রশাখা, কত যে গুজব আর গুঞ্জন, গুজব ও গুঞ্জনের বিশাল ফ্যাক্টরি আছে এখানে। কত কথা বলা হয়, যার সাথে সত্যের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচনকালীন সরকার অর্থাৎ, মন্ত্রিসভা ছোট হবে কি হবে না তা প্রধানমন্ত্রীর উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে কাদের বলেন, বিষয়টা একান্তই প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তবে এই মন্ত্রিসভা থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।