দেশের আইন অনুযায়ী কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না, সে অনুযায়ী খালেদা জিয়াও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হয়েছিল। এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল ওই কথা বলেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছেন, এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করবেন না তাঁরা।অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির সাজা কমানোর যে আবেদন করা হয়েছিল, হাইকোর্ট তা খারিজ করে দিয়েছেন। দুদকের পক্ষ থেকে সাজা বাড়ানোর যে আবেদন করা হয়েছিল, তা গ্রহণ করা হয়েছে। তা থেকে সাজা ৫ বছর থেকে বাড়ি ১০ বছর করা হয়েছে।

এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না।সে অনুযায়ী খালেদা জিয়াও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যে মুখ্য অপরাধী, তা যুক্তি-প্রমাণের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া সকল আসামির সাজা দশ বছর করা হয়েছে।অপরদিকে সুপ্রিম কোট আইনজীবী সমিতিতে নিজ কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার, আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, এই মুহূর্তে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাব না। সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা আমাদের প্রতিক্রিয়া পরে জানাব।

এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ের সামনে এ রায়ের বিরুদ্ধে মিছিল করেন। অবৈধ রায় মানি না মানব না বলে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা।এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ রায় দেন। রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অর্থদণ্ডের টাকা প্রত্যেককে সম-অঙ্কে প্রদান করার কথা বলা হয়। আজ খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির সাজা কমানোর যে আবেদন খারিজ করে দিয়ে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন হাইকোর্ট।পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তিনটি আপিল খারিজ করেছেন আদালত। দুদকের সাজা বৃদ্ধির রিভিশনটি মঞ্জুর করেছেন। মঞ্জুর করে খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে ১০ বছরে বৃদ্ধি করেছেন। হাইকোর্টে এতদিন যে শুনানি চলছিলো এ রায়ের মাধ্যমে তার পরিসমাপ্তি ঘটলো।সাজার পর খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাজাপ্রাপ্ত হলে নিশ্চয়ই পারবেন না। যে পর্যন্ত সাজা বাতিল না হয়। আপিল করে যদি সাজাটাকে বাতিল করা হয়।তিনি বলেন, এখানে দুই রকম ব্যাখ্যা। এক. সাজার কার্যকারিতা স্থগিত করা। দুই. সাজা বাতিল করা। এক্ষেত্রে আমার অভিমত হলো কেউ যদি নির্বাচন করতে চান, সাজাটা আদালতের মাধ্যমে বাতিল করতে হবে। সাময়িক স্থগিত থেকে নির্বাচন করা যাবে না বলে মনে করি।যদি আপিল বিচারাধীন থাকে তাহলে কি হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আপিল পেন্ডিং থাকলেও লাভ হবে না। স্থগিত হলে জেল থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কিন্তু নির্বাচনে নয়। পলাতকদের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা পলাতক আছে তারা আপিল করেননি। তাদের সম্পর্কে হাইকোর্টের বলার অবকাশ নেই। যারা সামনে আছেন তাদের সম্পর্কে হাইকোর্ট বলতে পারবেন। পলাতকদের সাজা বহাল থাকবে নিশ্চয়ই, যে পর্যন্ত হাইকোর্ট থেকে বাতিল না হয়।খালেদার আইনজীবীদের উপস্থিত না থাকার বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, এটা তাদের ইচ্ছা। গত চার মাস সম্পূর্ণ রকমের সুযোগ দিয়েছিলেন আদালত। এরকম সুযোগ নজিরবিহীন। আজকেও আদালতে তাদের প্রতিনিধি ছিলো। রায়ের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬(২) ডি অনুসারে খালেদা জিয়া নির্বাচনের অযোগ্য আগেই হয়ে গেছেন। কাজেই এখন নতুন করে বলার কিছু নেই। আগেই ওনার পাঁচ বছর সাজা হয়েছে। চ্যারিটেবলে সাত বছর। আজকে ১০ বছর হলো। কাজেই ওনার পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ আর সম্ভব না। জামিনও অটোমেটিক বাতিল হয়ে যাবে।

খুরশীদ আলম খান আরও বলেন, উনি দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হয়েছেন। তাছাড়া সংবিধানে বলা আছে, নৈতিক স্খলনের দায়ে কেউ যদি দু’বছর দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে থাকে, তাহলে এই সাজা শেষ হওয়ার পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যন্ত সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। ৬৬(২) ডি অনুসারে নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না। আপিল করলে কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা তখন দেখা যাবে। এটার জন্য রায়ের জাবেদা নকল পেতে হবে। আপিল করতে। সে সময় এখনো আসেনি।