দলীয় নয়, জাতীয় স্বার্থ নিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সংলাপ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার ড. কামাল হোসেন। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে সংলাপে বসার একদিন আগে আজ বুধবার সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভায় তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

এ সময় ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সংলাপে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা সব সময় মনে করি, জনগণ ক্ষমতার মালিক। তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ করবে দেশের স্বার্থ নিয়ে, দলীয় স্বার্থ না। আমরা চাই, জাতীয় স্বার্থ নিয়ে সংলাপ হোক। জাতীয় লক্ষ্যগুলোকে সামনে রেখে, সংবিধানের মূল্যবোধকে সামনে রেখে সেই আলাপ অবশ্যই হোক-এটা আমরা সব সময় সমর্থন করেছি। আগামীকাল যেটা হবে, সেটাও আমরা পুরোপুরি সমর্থন করি। আসুন এই ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ সংলাপের মধ্য দিয়ে ঐক্যমতে এসে, দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। ঐক্যবদ্ধ জনতার জয় হবেই হবে।’

আগামী সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তুলে ধরে ড. কামাল বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনে জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে। সেটাকে সুসংহত করে, শক্তিতে পরিণত করে যেভাবে একাত্তরের স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, যেভাবে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আমরা ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছিলাম একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। তারপরও দেখা যায় যে সেই ফসল ধরে রাখতে পারি না। এবার অনুরোধ করব, আবেদন করব সবাই সংগঠিত হোন, ঘরে ঘরে, পাড়া-মহল্লায় গ্রামে গ্রামে। এবারে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। কিন্তু নির্বাচনের যে ফসল, সেটা যেন আমরা ধরে রাখতে পারি। সেটা যেন কেউ এবার আত্মসাৎ করতে না পারে। আসুন দেশের মালিক হিসেবে আমাদের স্বার্থ ও সম্পদকে রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি।’

একই সমাবেশে উপস্থিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী যে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তা কতটা আন্তরিকতার সাথে আহ্বান করেছেন এবং সেই সংলাপের পরিণতির দ্বার কোন দিকে নিয়ে যাবে, সে সম্পর্কে জনগণের মধ্যে ইতিমধ্যেই সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবার জন্যে, মানুষের অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে আনবার জন্যে, সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করবার জন্যে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আজকে জাতীয় সংলাপের মধ্য দিয়ে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার তিনি করবেন। আমরা সাত দফা দাবি দিয়েছি, তা অবশ্যই পূরণ করবেন। এ ছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের কোনো সমাধান হবে না।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা সাত দফা দাবি পেশ করেছি। আগামীকাল আলোচনা হবে এই দাবির ভিত্তিতে। এই তিনদিনে বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একটি মামলায় সাত বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। আরেকটি মামলার আপিলে তার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। আজকে আরেকটি রায়ে বলা হয়েছে যে, বিএনপি যে তার গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছিল, সেই সংশোধনী গ্রহণযোগ্য নয়।’

ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী ও নেতাদের বক্তব্যের জবাবে মান্না বলেন, ‘ক্ষমতাহীনরা বলছেন, সংবিধান সম্মত আলোচনার জন্য তারা আমাদের ডেকেছেন। অবশ্যই আন্তরিকভাবে এই সংলাপের মাধ্যমে একটা পরিসমাপ্তি ও নিষ্পত্তি চাই। যদি আগেই কেউ দেওয়াল তুলে দেন, তাহলে সংলাপ হবে না, আগেই যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেন যে কথা বলা যাবে না—তাহলে সংলাপ হবে না, আগেই যদি সংবিধানের নামে বেড়াজাল সৃষ্টি করা হয় সংলাপ সফল হবে না।’

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যমতের সরকার করতে হবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেজন্যই আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি। এজন্য দেশের মানুষ আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সরকারকে বলব, সাত দফা দাবি মেনে নিন। আমরা প্রত্যাশা করি, সংলাপের মাধ্যমে এর সমাপ্তি আসবে। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, দেশে যদি শান্তি চান, মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে চান, তাহলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা নিয়ে আলোচনা করুন। সংলাপকে সফল করতে হবে, জনগণকে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’

জাতীয প্রেসক্লাবে আয়োজিত আজকের এই আলোচনা সভায় সামাজিক শক্তি, গণ-সাংস্কৃতিক দল, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দল, ভূমিবল সমাজবাদী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, কংগ্রেস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, জাতীয় বিপ্লবী পার্টিসহ মোট ১৯টি দল ও সংগঠন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে বলে জানান অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর হীরু।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, সহসভাপতি এম এ গোফরান প্রমুখ।