দেশে কিডনি, বোনম্যারো (অস্থিমজ্জা), চামড়া এবং চোখের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। আইনে এর বাইরেও আরও কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ থাকলেও নানা কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসকদের মতে, যত বেশি মানুষের মধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে এবং ক্যাডাভার ডোনেটের পরিমাণ বাড়বে, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রোগীর সুস্থতার সুযোগও তত বাড়বে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, ‘আমাদের দেশের অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন অনুযায়ী হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, খাদ্যনালী— এগুলো প্রতিস্থাপন করা যাবে। জীবিত ব্যক্তির কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কিডনি ও স্কিন প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করতে গেলে তো জীবিত মানুষ থেকে নেওয়া সম্ভব না। এটি নিতে হবে ক্যাডাভার থেকে। যখনই কোন ব্যক্তি তার মৃতদেহ ডোনেট করে যাবে সেখান থেকে আটটি অঙ্গ ক্যাডাভার থেকে নেওয়া যাবে।’

তিনি জানান, ক্যাডাভারের মাধ্যমে হৃদপিণ্ড, অন্ত্র, যকৃত, অগ্নাশয়, চোখ, চামড়া ও টিস্যু প্রতিস্থাপন করা সম্ভব।
বিএসএমএমইউয়ের হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, ‘আমাদের দেশে ছয়/সাত বছর আগে চারটি লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি বারডেম হাসপাতালে ও দুটি ল্যাবএইডে প্রতিস্থাপন করা হয়। এগুলোর আউটকাম তেমন ভালো হয়নি। এর মধ্যে যারা ডোনার ছিল তাদের নিয়েও অভিযোগ ছিল। এটা নিয়ে অনেক লেখালেখি হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায়।’

বিএসএমএমইউতে এখনও লিভার প্রতিস্থাপন হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের সুযোগ আছে। নেপাল ও পাকিস্তানেও এখন লিভার ট্রান্সপ্লান্ট হয়, কিন্তু আমরা পিছিয়ে আছি। পাকিস্তান এরই মধ্যে শততম ট্রান্সপ্লান্ট সেলিব্রেট করেছে।’
দেশে লিভারের সার্জনদের আগ্রহের অভাব আছে বলে মত দেন তরুণ চিকিৎসকরা সাহসী হলে এ দেশেও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা সম্ভব হবে।’

শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমরা আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীর স্কিন তুলে ফেলে তার নিজের স্কিন নিয়ে নতুন স্কিন লাগাই। এটিও প্রতিস্থাপনের একটি অংশ।’
যেসব রোগীর স্কিন ড্রাফটিং করা হয়, সেগুলো রোগীর নিজের দেহের স্কিন নিয়েই করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের ইনস্টিটিউটে ‘স্কিন ব্যাংক’ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ১৯৯৯’-এ দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ’ হলো মানবদেহের কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, অন্ত্র, যকৃত, অগ্নাশয়, অস্থি, অস্থিমজ্জা, চোখ, চামড়া ও টিস্যুসহ মানবদেহে সংযোজনযোগ্য যে কোনও অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ। আইনে শুধু নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে মানবদেহের কোনও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেনা-বেচা বা এর বিনিময়ে কোনও ধরনের সুবিধা নেওয়া এবং এ উদ্দেশ্যে কোনও ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়া বা অন্য কোনও প্রচারণা নিষিদ্ধ।