রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নেওয়া বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পরিকল্পনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। গত মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্র“পের বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে একটি যথাযথ পরিকল্পনা নেওয়ার কথা জানায় মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। জাতিসংঘ অভিযোগ তুলেছে, এই পরিকল্পনায় শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর- কে যুক্ত করা হয়নি। তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি। এমন সময় ওই প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা সম্পন্ন হয়, যার এক সপ্তাহ আগে জাতিসংঘের অনুসন্ধানে রাখাইনে গণহত্যা চলমান থাকার কথা জানা গেছে।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের নভেম্বরে অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পার্সন্স ফ্রম রাখাইন স্টেট’ নামে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। পরে গত ৬ জুন নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেওয়ার সুনিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ বলছে, এখন পর্যন্ত কোনও রোহিঙ্গাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে ২৪ হাজার ৩৪২ জন রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হয়েছে। তবে নিরাপদ প্রত্যবাসন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক রোহিঙ্গাই জানাচ্ছে তারা ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে। গত মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্র“পের বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। তবে প্রত্যাবাসনের প্রথম ধাপ শুরু হবে বলে নিশ্চিত করলেও ঠিক কতজন রোহিঙ্গা প্রথম দফার প্রত্যাবাসনে ফেরত যাওয়ার সুযোগ পাবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি। বুধবার মিয়ানমার কর্মকর্তারা দাবি করেন, তারা ৫ হাজার রোহিঙ্গাদের তালিকা পর্যালোচনা করেছে। চলতি মাসেই ২ হাজার জনের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তবে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, এই প্রত্যাবাসন পরিকল্পনায় খুবই অবাক হয়েছে শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার। তিনি বলেন, শরণার্থী ইস্যু নিয়ে কাজ করা ইএনএইচসিআর এর সঙ্গে কোনও আলোচনাই করা হয়নি।বর্তমানে কক্সবাজারে অবস্থান করা জাতিসংঘ শরণার্থী কমিশনের কর্মকর্তা ক্রিস মেলজার বলেন, প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা নিয়ে তাদের কিছু জানানো হয়নি। তিনি বলেন, আমরা হয়তো ফিরে যাওয়া ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কোনও ধরাবাঁধা সময় ও নির্দিষ্ট সংখ্যক রোহিঙ্গাকে যুক্ত করার বিরোধিতা করতাম। আমরা জানি না যাদের নাম পাঠানো হয়েছে তারাও নিজেও জানেন কি না। প্রত্যাবাসন শুরুর আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি।

বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিন্ত থু। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন এবং ফেরার পর নিরাপদ ও সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন তিনি।