কয়েক দফা সময় নিয়ে অবশেষে সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। আজ সোমবার দুপুরে মতিঝিল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক অনুষ্ঠানে তিনি যোগদানের এ ঘোষণা দেন। এ সময় কাদের সিদ্দিকী বলেন, যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে নিয়ে ঐক্যের ইচ্ছা ছিল, তবে তা না হলেও আশা ছাড়েননি তিনি।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করা হয়। গত নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম আলোচনায় বসুন। তিনি বসেননি। খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছিলাম হরতাল প্রত্যাহার করার। কিন্তু তাদের সেই সৌভাগ্য হয়নি। জনগণই হরতাল উঠিয়ে নিয়েছে। আজ যে মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় বসেছে তখন থেকেই দেশের পরিস্থিতি একটু হলেও ভালো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যেখানে আওয়ামী লীগ তাদের ছাড়া আর কাউকে দেখতো না, আজকে সংযত ভাষায় তারা কথা বলতে শুরু করেছে। আমি সেটাই চেয়েছিলাম। পোড়া মাংসের গন্ধ গণভবনে বসে শুঁকতে শিখেছেন, এ জন্য তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই। অনেক দিন থেকে কথা হচ্ছিল, আমরা বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনকে একসাথে নিয়ে একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ৩ নভেম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জেলহত্যা দিবসে আমাদের একটি আলোচনা সভা ছিল। সেই সভাতেও আমি বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে আহ্বান করেছিলাম। তিনি আসতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু যখন তিনি শুনলেন ড. কামাল হোসেন প্রধান অতিথি হবেন তিনি আসেননি। এজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করি না। ঠিক আছে। ৩ নভেম্বর আসেননি, ডিসেম্বরে নিশ্চয়ই আসবেন। সেই প্রত্যাশায় আমরা রইলাম। তবে তার ইচ্ছা যদি হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকুন, তার সন্তান মাহী বি চৌধুরী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে আসুক তাহলে তাকে বাংলাদেশের মানুষের কোনো প্রয়োজন নাই।’
ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বঙ্গবীর বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজন বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি। আমরা গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন চাই, বিশ্বাসযোগ্য একটি নির্বাচন চাই, মানুষের ভোটের নির্বাচন চাই। তাই আনন্দের সাথে আমি আমার দলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে আজ ৫ নভেম্বর, এই মুহূর্ত থেকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করলাম। দেশবাসীর কাছে আমার প্রার্থনা, আমাদের প্রার্থনা যাতে তারা দেশকে মুক্ত করার জন্য ড. কামাল হোসেনের পাশে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে সাহায্য করেন, সহায়তা করেন। আল্লাহ আমাদেরকে সহায় করুন।’

তিনি বলেন, ‘আমার সমস্ত মেধা ও শক্তি দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কাজ করব। আইনের কাজ করবেন ড. কামাল হোসেন। আর আমরা লড়াই করব। টিক্কা খানের সঙ্গে যদি আমরা জিততে পারি তাহলে আজকের এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধেও আমরা জিততে পারব ইনশাআল্লাহ।’ এই অনুষ্ঠানের আগে কাদের সিদ্দিকী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। ক্ষুদ্র পরিসরে জাতীয় ঐক্যের নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করেন।  এর আগে গত ৩১ অক্টোবর কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘আমি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে থাকব কি না, সেটা ৩ নভেম্বর জানাবো।’ তবে সিদ্ধান্ত জানাতে গত শনিবার বিকেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের কাছে একদিনের সময় চেয়ে নেন কাদের সিদ্দিকী। বঙ্গবীর বলেন, ‘সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আমাকে যোগ দিতে বলেছেন। আমি যদি যোগ দেই, তাহলে মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করব। আর যদি আপনাদের সঙ্গে নাও থাকতে পারি, তাও জানিয়ে দেব।’

এ অবস্থায় ওইদিন রাত ৯টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মপুর এলাকায় কাদের সিদ্দিকীর বাসভবনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দেড় ঘণ্টার বৈঠক করেন। বৈঠকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাদের সিদ্দিকীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করার জন্য অনুরোধ করেন বিএনপি নেতারা। শেষ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিলেন কাদের সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাজাহান, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, ঐক্যফ্রন্টের নেতা আ অ ম শফিক উল্লাহ, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রমুখ। এছাড়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সহ সভাপতি নাসিরন কাদের সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।