৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার দিন ঠিক করলেও তার আগের দিন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপে নজর রাখছে নির্বাচন কমিশন।তফসিল এখনি ঘোষণা না করতে সোমবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বানের পর কমিশনের এই অবস্থান জানান ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা সংলাপ শেষে হওয়ার আগে না করতে আহ্বান জানিয়ে আসছিল কামাল হোসেনের উদ্যোগে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

সোমবার বিকালে জোটের একটি প্রতিনিধি দল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)কে এম নূরুল হুদা ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের দাবি জানান।খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, যার মীমাংসা সংলাপে আশা করছে তারা। তাই তারপরই নির্বাচনের কাজে নামতে ইসিকে আহ্বান তাদের।সিইসির সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র আ স ম আবদুর রব সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৭ নভেম্বরের সংলাপ ও পরে ফলাফল না জেনে তফসিল ঘোষণা না করতে দাবি জানিয়েছি। ওই তারিখে তফসিল ঘোষণা করতে হবে, এমন তো কোনো কথা নেই। ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় রয়েছে।

তাদের ভোটগ্রহণ সংক্রান্ত কিছু দাবি পূরণে ইসির প্রতিশ্র“তি মিলেছে, কিছু বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইসি নেয়নি বলে জানান রব।গ্রেপ্তারি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছি। ইভিএম ও সেনাবাহিনী নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তফসিলের বিষয়ে আমাদের প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।ইভিএমের বিরোধিতা করে রব বলেন, আমরা চাই না, ভোটাররা চায় না; ইভিএম দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে সিরিয়াস হবেন না।ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে বৈঠকে জেএসডির সভাপতি রবের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরকতউল¬াহ বুলু, জেএসডির আব্দুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণফোরামের আ ও ম শফিক উল্যাহ, মোকাব্বির খান, নঈম জাহাঙ্গীর এবং জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

রব বলেন, অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি ড. কামাল হোসেন। কমিশনকে ধন্যবাদ। অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে।তবে বৈঠকে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনারদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় বলে ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, উত্তপ্ত কথা নয়। গলার আওয়াজটা এরকম উনারা রাজনীতিবিদ। ওভাবেই কথা বলতে অভ্যস্ত তারা।অত্যন্ত সুন্দর ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে’ বলে জানান তিনি।ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সিইসির দুই ঘণ্টা বৈঠকের পর হেলালুদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, উনারা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৭ নভেম্বর আলোচনা রয়েছে তাদের; তাতে নজর রাখতে বলেছেন।তফসিল ঘোষণার একমাত্র এখতিয়ার ইসির। নির্বাচন কমিশন সেটা খেয়াল করে দেখবেন যে ৮ তারিখের তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়ে রয়েছে। আমার মনে হয় না পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবেন; আগামী ৮ নভেম্বর এ বিষয়ে বৈঠকে কিন্তু ৭ তারিখের ফলাফল ওখানে প্রতিফলিত হতে পারে।

তফসিল ঘোষণা পেছানো হবে কি না- জানতে চাইলে সচিব বলেন, কমিশন সেভাবে বলেননি। এ বিষয়ে ৮ নভেম্বর সকাল ১০টায় সভা হবে। সেখানে পুরো বিষয়টি দেখবে।সংলাপে কোনো ফল এলে তফসিল ঘোষণা পেছানো হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখানে বলা যাচ্ছে না। ৮ নভেম্বর কমিশন সভায় বিষয়টি দেখবেন। ডিসেম্বরের নির্বাচনের সব প্রস্তুতি রয়েছে; ৮ নভেম্বরের প্রস্তুতিও রয়েছে।রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফল জানাবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৮ বা ৯ নভেম্বর এ সংবাদ সম্মেলন হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।ইসি সচিব জানান, ঐক্যফ্রন্টের দাবি অনুযায়ী ভোটার, ভোটকেন্দ্র ও পোলিং এজেন্টের নিরাপত্তা ইসি বিধান করবে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের স্বাক্ষরসহ ফল ঘোষণা করা হবে।তিনি জানান, সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কোন কেন্দ্রে ভোট হবে তা সিদ্ধান্ত হয়নি। আর তফসিল ঘোষণার পরই সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।