প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অবসানের শতবর্ষ পূর্তির স্মরণানুষ্ঠান উপলক্ষে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জড়ো হয়েছেন বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশের নেতারা। রোববার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও বিশ্ব নেতারা যে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে প্রথম মহাযুদ্ধের অবসান হয়েছিল তার শতবর্ষ উদযাপন করবেন ও ওই মহাযুদ্ধে নিহত সৈন্যদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাবেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

শতবর্ষ আগে ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর ফ্রান্সের স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় ইউরোপের পশ্চিম রণাঙ্গনের কামানগুলো নিরব হয়ে গিয়েছিল, এর মাধ্যমে চার বছর ধরে চলা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘোষিত হয়েছিল। এ যুদ্ধ এক কোটি সৈন্য ও লাখ লাখ বেসামরিকের জীবন কেড়ে নিয়েছিল। ১০০ বছর পরে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ প্যারিসের আক দ্য ত্রিয়ুফের নিচে দাঁড়িয়ে ওই সৈন্য ও তাদের পরিবারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ভাষণ দিবেন। ১৮০৬ সালে সম্রাট নেপোলিয়নের তৈরি এই স্মৃতিস্তম্ভটিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত অজ্ঞাত এক সৈন্যকে কবর দেওয়া হয়েছিল।এই অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ বহু রাজরাণী, রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানের পর তারা সবাই এলিজে প্রসাদে ম্যাক্রোঁর সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নিবেন।একশ বছর আগে প্যারিসের উত্তরে কমপিয়েনে বনে ফ্রান্স ও জার্মানির প্রতিনিধিরা যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিলেন। শনিবার ওই একই জায়গায় এক অনুষ্ঠানে ম্যাক্রোঁ ও মের্কেল পরস্পরের হাত ধরে আবেগের এক বিরল প্রদর্শনী দেখিয়েছেন যা এর আগে দুটি বিশ্ব শক্তির নেতাদের মধ্যে আগে দেখা যায়নি।

১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর প্রামাণিক বিবৃতি লিখেছিলেন সৈন্যরা। রোববারের অনুষ্ঠানে একশ বছর আগে সৈন্যদের লেখা ওইসব বিবৃতি ফ্রেঞ্চ, ইংরেজি ও জার্মান ভাষায় পাঠ করে শোনাবে হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা।প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম সবচেয়ে রক্তাক্ত লড়াই ছিল। এই যুদ্ধ ইউরোপের রাজনীতি ও মানচিত্র বদলে দিয়েছিল। যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরিত হলেও তা মাত্র দুই দশক টিকেছিল, এরপর নাৎসি জার্মানির উত্থান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করেছিল। রোববার বিকালে ম্যাক্রোঁ প্যারিস পিস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ব নেতাদের স্বাগত জানাবেন। এই ফোরাম শাসনপ্রক্রিয়া ও বহুপাক্ষিক নিরাপত্তা উদ্যোগের উন্নয়ন ও যেসব ভুলের কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল সে ধরনের ভুল এড়ানোর কৌশল উদ্ভাবনে কাজ করবে।তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যিনি আমেরিকা ফার্স্ট জাতীয়তাবাদী নীতিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি এই ফোরামের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না।