একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আরও পেছানোর দাবি নিয়ে বুধবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, তা করতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু তা করা হয়নি। এতে তাঁরা অত্যন্ত হতাশ।মঙ্গলবার বেলা এগারোটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মির্জা ফখরুল, ড. কামাল হোসেন, মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

মির্জা ফখরুলের ভাষ্য, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করতে আগ্রহী নয়। তফসিল এক মাস পেছানোর দাবি অন্তত জরুরি। ভোট গ্রহণের যে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে, সে সময় বড়দিনের ছুটি থাকবে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের এখানে আসার সুযোগ থাকবে না। এগুলোসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে
তিনি বলেন, আমরা যে দাবি করেছি নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি। আমরা আগামীকাল দুপুর ১২টায় আমাদের এই দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যাব। ড. কামাল হোসেন সাহেবসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ সেখানে থাকবেন।আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন আমাদের নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

নির্বাচন কমিশন প্রথম দফার তফসিলে ২৩ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ ঠিক করলেও নির্বাচন এক মাস পেছানোর দাবি জানিয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট।এরপর ইসি নির্বাচন পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ ঠিক করে পুনঃতফসিল দিলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় বিএনপি ও তাদের শরিকরা।বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের এড়িয়ে ‘ভোট চুরির’ নির্বাচন করতেই নির্বাচন কমিশন ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ দিয়েছে বলে তারা মনে করছেন। তবে নির্বাচন আরও পেছানোর দাবি নাকচ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটের তারিখ ৩০ ডিসেম্বরের পরে নেওয়ার সুযোগ নেই।সিইসির বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সেজন্য তো যাচ্ছি। উনি (সিইসি) স্পষ্ট করে বললেই তো হবে না। আমরা আমাদের দাবি-দাওয়াগুলো অবশ্যই বলব। সিইসি তো সব একাই বলে যাচ্ছেন।নির্বাচন এক মাস পেছানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন এক মাস পেছাতে আমরা দাবি করেছি এজন্য যে, তফসিল যে সময় ঘোষণা করা হয়েছে সে সময়টিতে বড়দিনের ছুটি থাকে। ওই সময়টি আমাদের খ্রিস্টান সম্প্রদায় একটা উৎসবের আমাজে থাকেন, তাদের ধর্মীয় বড়দিন।

এছাড়া নববর্ষ আসছে, সেটা একটা বড় অনুষ্ঠান। একই সঙ্গে আমরা যে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আশা করছি,একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন দেখার জন্য তাদের সেই সুযোগও থাকছে না যদি ওই সময়ে ভোট হয়।পুনঃতফসিলে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ রাখায় ঐক্যফ্রন্ট হতাশ হয়েছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, আমরা মনে করছি, কমিশন একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করবার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নয়।নির্বাচন কমিশনে কোন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে তা ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা কামাল হোসেন আগামী ১৬ নভেম্বর সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। পরে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্তাদের সঙ্গেও সম্পাদকদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন।নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপি কীভাবে আসন ভাগাভাগি করবে, সে সিদ্ধান্ত আরও পরে নেওয়া হবে জানান ফখরুল।