রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে।পুলিশের গুলি,কাঁদানে গ্যাসের শেল ও লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। নেতাকর্মীদের পাল্টা হামলায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।বুধবার দুপুর ১টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। পুরো নয়াপল্টন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। নেতাকর্মীরা পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তৃতীয় দিনের মতো আজ সকাল ১০টা থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে বিএনপি। সেই মনোনয়ন নিতে সকাল থেকে মিছিল-ব্যানার- ফেস্টুন নিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিপুল সংখ্যক সমর্থক।

এদিকে,সকাল থেকে নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে ছিলেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য।তাঁরা যানবাহন চলাচলের জায়গা করে দিতে রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাস্তা সচল রাখার জন্যই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।বেলা সাড়ে ১১টার পর নয়াপল্টনের সামনের রাস্তা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। একপর্যায়ে ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১টার দিকে পুলিশ সদস্যরা গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের রাস্তা ছেড়ে দিতে বলেন। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা বিএনপির নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখন নেতাকর্মীরাও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। শুরু হয় দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। পুলিশ সাঁজোয়া যান থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে। মাঝেমধ্যে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। নেতাকর্মীরা পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

বিএনপির নেতাকর্মীরা বর্তমানে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে। মাঝেমধ্যে তারা স্লোগান দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। পুলিশ জোনাকি সিনেমা হলের সামনে ও দৈনিক বাংলা মোড়ে অবস্থান নিয়েছে।এদিকে, সংঘর্ষের কারণে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় যান চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। ঝাড়ু হাতে নিয়ে মিছিল করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আব্বাস, মহানগর যুবদল নেতা মেহেদী হাসান নয়ন, ঢাকা মহানগর মতিঝিল থানার যুবদল নেতা মকবুল, খিলগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাক, মুগদা থানার ৭১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি সমু, কলাবাগান স্বেচ্ছাসেবক দলের শাবান, মুগদা থানার সভাপতি আনিস, শাহজাহানপুর ছাত্রদল নেতা খলিল উদ্দিন, বাশার ও টুটুল, শাহবাগ থানা বিএনপির নেতা কামাল, পল্টন থানা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল কাদির, সবুজবাগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মনির, মুগদার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাইফুল, যুবদল নেতা মেহেদী হাসান মিরাজ, রমনা থানার ছাত্র নেতা প্রিন্স, ঢাকা পূর্ব ছাত্রদলের নেতা গিয়াস উদ্দিন মানিক, যুবদল নেতা হৃদয় শেখ, শামসুল হক, পল্টন শ্যমিক নেতা আবদুর রাজ্জাক, বিএনপির রতনসহ আরো অনেকে।

সংঘর্ষের ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কোনো প্রকার উসকানি ছাড়াই তারা পিকেটিং করেছে, পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ আহত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ধৈর্য ধরে সামাল দেওয়ার। তবে আমরা এখন পর্যন্ত অ্যাকশনে যাইনি। এটা পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে। পুলিশের দুটি গাড়ি পোড়ানো ছাড়াও সাঁজোয়া যানে আগুন লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর চেষ্টা করেছি। এরপর যে নির্দেশনা আসবে, সে অনুযায়ীই কাজ করা হবে।

এদিকে, সরকারের নির্দেশে বিনা উসকানিতে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের পর নয়াপল্টনে কার্যালয়ের সামনের সড়কে তাৎক্ষণিক প্র তিবাদ সমাবেশে রিজভী এ অভিযোগ করেন।রিজভী বলেন, আমরা শান্তির পক্ষে। সরকারের নির্দেশে পুলিশ বিনা উসকানিতে এই আক্রমণ করেছে। তারপরও আমরা অশান্তির পথে হাঁটব না। সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দেবো।বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আপনাদের শান্ত হতে বলেছেন। আপনারা রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতে বসে পড়ুন। এটা তারেক রহমানের নির্দেশ।সরকারের কোনো উসকানিতে পা দেবেন না।আপনারা শান্ত হোন।অন্যদিকে, বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, পল্টনের ঘটনা সরকারের পরিকল্পিত। সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে।