একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক মাস পেছানোর যে দাবি নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিল, তা নাকচ করে দিয়েছে ইসি।এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার কমিশনের আলোচনার পর ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান।তিনি বলেন, জানুয়ারিতে আইনি ও সাংবিধানিক কিছু বিষয় রয়েছে। ঐক্যফ্যন্টের দাবির চুলচেরা বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে, ৩০ ডিসেম্বরের ভোট পেছানোর আর কোনো সুযোগ নেই।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এবং চার নির্বাচন কমিশনার বৃহস্পতিবার সকালে ওই বৈঠকে অংশ নেন বলে জানান সচিব।নির্বাচন কমিশন প্রথম দফার তফসিলে ২৩ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ ঠিক করলেও নির্বাচন এক মাস পেছানোর দাবি জানিয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট।এরপর ইসি নির্বাচন পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ ঠিক করে পুনঃতফসিল দিলেও তাতে আপত্তি জানায় বিএনপি ও তাদের শরিকরা।বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের এড়িয়ে ভোট চুরির নির্বাচন করতেই নির্বাচন কমিশন ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ দিয়েছে বলে তারা মনে করছেন।

তবে নির্বাচন আরও পেছানোর দাবি নাকচ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সেদিন সাফ জানিয়ে দেন, ভোটের তারিখ ৩০ ডিসেম্বরের পরে নেওয়ার সুযোগ নেই।এরপর ঐক্যফ্রন্ট বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত জানায়। জোটের প্রতিনিধিরা বুধবার বিকালে প্রায় দুই ঘণ্টা আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন।ওই বৈঠকের পর ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, আলোচনায় তারা সন্তুষ্ট। নির্বাচন চলাকালে কমিশনের সহোযোগিতা পাবেন বলেই তারা আশা করছেন।তবে এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে জোটের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি সামগ্রিকভাবে একটা কথা বলি, আমাদের নির্বাচনে থাকা না থাকা নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণের ওপর।ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন দাখিল করা যাবে। ২ ডিসেম্বর বাছাইয়ের পর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা।

এর আগে সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশার (সিইসি) কে এমন নুরুল হুদার সভাপতিত্বে আয়োজিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।সকাল ১১টা থেকে ১২ পর্যন্ত টানা এক ঘণ্টা বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও অন্যান্য কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন সচিব উপস্থিত ছিলেন।

পরে বিকেলে ইসির মিডিয়ার সেন্টারে আয়োজিত প্রেসবিফ্রিং এ সচিব বলেন, গতকাল ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ মাননীয় কমিশনের নিকট এসে বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করেছে। সেজন্য আজকে নির্বাচন কমিশন তাদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করেছেন এবং নিজেদের ভেতরে বৈঠক করেছেন।সচিব বলেন, বৈঠক করে কমিশনাররা এই সিদ্ধান্তে নিয়েছেন যে, জানুয়ারি মাসে বেশ কয়েকটি আইনি ও সাংবিধানিক বিষয় আছে। যা হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে কাজগুলো করতে হবে। যেমন যদি পুনর্র্নিবাচন করতে হয়, উপনির্বাচন করতে হয়, নির্বাচনে অনিয়ম হলে তদন্ত করা, গেজেট প্রকাশ করা, নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ ইত্যাদি। হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এ ছাড়া বিশ্ব ইজতেমা জানুয়ারি দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। এত প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ ধর্ম প্রাণ মুসল্লি অংশ নিয়ে থাকেন এবং লক্ষাধিক আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন থাকেন। সব দিক বিবেচনা করে এবং চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ৩০ ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন পেছানোর ইসির কাছে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত এবং বাস্তব সম্মত না হওয়ায় নির্বাচন পেছানোর আর কোনো সুযোগ নেই বলে ইসি সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

সচিব বলেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষক নয়, আমরা এ দেশের নাগরিক যে ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটার তাদের বিষয়গুলো আগে বিবেচনা করব। তবে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সবসময় আমরা স্বাগত জানাই। সেনাবাহিনী মোতায়েন সম্পর্কে হেলালুদ্দীন বলেন, সকালে আমি বলেছিলাম। ২ থেকে ১০ দিনের মধ্যেসেনাবাহিনী নামবে। আসলে আমি বিষয়টি বুঝতে চেয়েছিলাম সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তারারা সেনাবাহিনীর জন্য ১০ দিন আগে থেকে তাদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করবেন। তবে নির্বাচন কবে কখন কীভাবে সেনা মোতায়েন করা হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।ইসি সচিব আরো বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকা নিবন্ধিত দলগুলো বিএনপির প্রতীক ধানের শীষে’ নির্বাচন করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে জোটগতভাবে নির্বাচন করার যে তালিকা ইসিতে জমা দিয়েছে, সেখানে বিকল্পধারা ও জাতীয় পার্টি নেই।