বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, গণভবনে আওয়ামী লীগের প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রার্থীর সাক্ষাৎকার ও সেখানে সম্মিলিত হওয়ার জন্য দলীয় সভার আয়োজন করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। অথচ এরকম একটি রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় ও সরকারি অর্থায়নে সম্পূর্ণভাবে নিয়মবহির্ভূত দলীয় কার্যক্রমের বিষয়ে নিশ্চুপ নির্বাচন কমিশন। এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার টু শব্দটিও করেন না। তিনি বলেন, গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নির্বাচনি আচরণবিধির ১৪ (২) ধারার সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। ওই ধারানুযায়ী রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন না।

বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এসব অভিযোগ করেন। এসময় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।রিজভী আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনার জন্য কোনও আইনই প্রযোজ্য নয়। তার যেকোনও কথাই আইনের সমতুল্য বলে তিনি মনে করেন। গণভবনের আশেপাশের রাস্তায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভিড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়,সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আক্রমণ চালায়নি কেন ?শাসকগোষ্ঠীর চোখের ইঙ্গিতেই পুলিশ নড়াচড়া করে। ভোটারশুন্য করে রক্তাক্ত পথেই তারা নির্বাচন পার করতে চায়।

তিনি বলেন, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর অস্ত্র জমা দেওয়ার ব্যাপারে এখনও কোনও নির্দেশনা দেয়নি নির্বাচন কমিশন। বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের হাতে প্রচুর পরিমাণ বৈধ-অবৈধ অস্ত্র দেওয়া হয়েছে। রিজভীর ভাষ্য, নির্বাচনের সময় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও বৈধ অস্ত্র জমা দান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি হলেও নির্বাচন কমিশন নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। এতে প্রমাণিত হয়, নির্বাচন কমিশন বিশেষ দলের পক্ষেই নির্বাচনি মাঠ সমতল করছে।

বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমিশনের তৎপরতা আইনানুগ নয়। কমিশন স্ববিরোধী বক্তব্য রাখছে। রিজভী প্রশ্ন রাখেন, ‘গতকাল কমিশন বলেছে যে, নয়াপল্টনে শোডাউন আচরণবিধির লঙ্ঘন নয়, তাহলে তফসিল ঘোষণার পর কোন সাহসে পুলিশ বিএনপি’র উচ্ছ্বাসমুখর উপস্থিত নেতাকর্মীদের ওপর সহিংস আক্রমণ চালিয়েছে ? কার নির্দেশে এই পৈশাচিক আক্রমণ চালানো হয়েছে।রিজভীর দাবি, মানুষ বিশ্বাস করে বিএনপি’র নেতাকর্মীদেরকে পুলিশের গুলিতে ক্ষতবিক্ষত করার নির্দেশদাতা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একতরফা নির্বাচনে জয়লাভ করায়ত্ত্ব করতে বিরোধী দলশুন্য করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গতকাল পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের দিয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সহিংসতা ও নাশকতা করা হয়েছে।

রিজভী বলেন, প্রথমেই পুলিশ বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মিছিলে গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে ঘটনার সূত্রপাত করে। এই গাড়িচাপায় অন্তত ২০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ কীভাবে জনগণের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেয়, সেটি নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চাই। তিনি দাবি করেন, এছাড়াও সুপরিকল্পিতভাবে হেলমেটধারীরা পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে। এই হেলমেটধারী কারা, তা জনগণ জানে। যারা আগুন দিয়েছে তারা পুলিশের প্রোটেকশনে এই নাশকতার কাজ করেছে, এরা ছাত্রলীগ-যুবলীগের ঢাকা মহানগর নেতা।নয়া পল্টনে সংঘর্ষের সময় পুলিশের গাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে জড়িতরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।রিজভী তার এই পরিচয় দিলেও পুলিশ বলছে, ওই যুবক বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের পল্টন এলাকার আহবায়ক কমিটির সদস্য শাহজালাল খন্দকার কবীর।ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও এক ফেইসবুক পোস্টে অগ্নিসংযোগকারীকে ছাত্রদল নেতা অপু হিসেবে দাবি করা হয়েছে। ফেইসবুক পোস্টে তাকে গুলশান থানা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক অপু বলে প্রচার করার প্রেক্ষাপটে তাদের দেওয়া ওই পোস্টে বলা হয়, তাদের গুলশান থানা কমিটির ওই নেতার নাম মাহবুবুর রহমান মিথুন। দুজনের ছবিও দেওয়া হয়েছে ওই পোস্টে, যাতে তাদের চেহারা ভিন্ন বলে প্রতীয়মাণ হয়।