সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র তদন্তে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। মার্কিন উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তুর্কি সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ফোনকলের রেকর্ডিং ও অন্য প্রমাণাদি নিয়ে তদন্ত করার পর সিআইএ খাশোগি হত্যাকাণ্ডে যুবরাজ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে। এই কর্মকর্তা আরও জানান, খাশোগি হত্যাকাণ্ড বিন সালমানের অজান্তে ঘটেনি। তিনি এই অপারেশনের বিষয়ে জানতেন। এবং এর জন্য তিনিই নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সিআইএ’র তদন্ত প্রতিবেদন মিথ্যা বলে দাবি করেছে সৌদি আরব।

গত ২ অক্টোবর সৌদি কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার প্রয়োজনে গেলে নিখোঁজ হন সাংবাদিক খাশোগি। যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা-নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক খাশোগি ছিলেন বাদশাহ-যুবরাজসহ সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক।এ ঘটনার পর থেকে তুরস্ক দাবি করে আসছিল- সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরেই জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে। প্রথমদিকে অস্বীকার করে নানা রকম কথা বললেও অবশেষে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে খাশোগি নিহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে সৌদি। তবে তারা দাবি করে, কনস্যুলেটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মারামারি করে নিহত হন এ সাংবাদিক। সবশেষ বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল সৌদ আল মোজেব দেশটির রাজধানী রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে খাশোগির মরদেহ টুকরো টুকরো করার কথা স্বীকার করেন। সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, খাশোগির শরীরে ড্রাগ ইনজেকশন দেওয়া হয়। এরপর তাকে টুকরো টুকরো করা হয়। এরপর টুকরো করা দেহ কনস্যুলেটের বাইরে এক এজেন্টকে হস্তান্তর করা হয়। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের দায়ে সৌদির পাঁচ সরকারি কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন।

তবে এ হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান জড়িত নয় বলে দাবি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। অ্যাটর্নি জেনারেলের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, জামাল খাশোগিকে হত্যায় জড়িত সন্দেহে ২১ জনকে আটক রাখা হয়েছে। আটক ২১ জনের মধ্যে ১১ জনকে আদালতের মুখোমুখি করা হয়েছে। এছাড়া অন্য সন্দেহভাজনদের খাশোগি হত্যায় সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তদন্ত চলছে।

আমেরিকায় বসবাসরত খাশোগি ওয়াশিংটন পোস্টে নিয়মিত লিখতেন। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের ছোট ভাই এবং আমেরিকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন সালমানের সঙ্গে খাশোগির টেলিফোন আলাপ সিআইএ পরীক্ষা করেছে। ওই ফোনালাপে খালিদ খাশোগিকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে গিয়ে সৌদি কনস্যুলেট থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করতে বলেন। কিন্তু খাশোগি সেখানে গিয়ে নিহত হন। আর এসব কিছু তিনি ভাই মোহাম্মাদ বিন সালমানের নির্দেশে করেছেন বলে সিআইএ দাবি করেছে।খাশোগি হত্যার দুইদিন পরই খালিদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে সৌদি আরব ফিরে যান। অন্য একজনকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এদিকে সিআইএ’র প্রতিবেদন মিথ্যা বলে দাবি করেছেন প্রিন্স খালিদ বিন সালমান। তিনি এক টুইট বার্তায় বলেছেন, খাশোগির সঙ্গে তার কোনো ফোনালাপ হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, খাশোগির সঙ্গে তার ২০১৭ সালের অক্টোবরে ম্যাসেজের মাধ্যমে শেষ যোগাযোগ হয়। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির স্বার্থে খাশোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজের হাত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছেন। তবে সিআইএ’র তদন্তে যেসব তথ্য উঠে এসেছে তাতে এ হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজকে আর নির্দোষ বলার সুযোগ থাকছে না।