স্মৃতি ঝলমল গ্রামবাংলার ইছামতির বিলের মাঝে। পানি টলমল নবগঙ্গা নদীর কাছে আমার অনেক ঋণ আছে। তাইতো বার বার ফিরে আসি পরিবার এবং তোমাদের কাছে। মানবিক কারণে পাশে এসে দাঁড়ায় স্বশরীরে না হলেও ভালোবাসার ফেরিওয়ালা হয়ে দূর পরবাস থেকে। ছবিটি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত, এই ছবি যেন এক প্রতিচ্ছবি যা মনে করে দেয় ছোট বেলার দিনগুলোর স্মৃতি, বাধ্য করে আমাকে ফিরে আসতে দায়িত্ব, কর্ত্বব্যব্রতে এখনো সেই অতিতের স্নেহ, প্রেম, প্রিতি এবং ঋণের বোঝা ভরা এই বাংলার মানুষের কাছে। কতইনা ভালোবাসা ক্ষরণ হয় আমার এই ছোট্ট হৃদয়ে। এমন ভালোবাসা কী কারণে ঘৃণায় পরিনত হতে পারে? আমরা সমাজের অশিক্ষা, ঘুষ, দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচার, প্রতারণা রোধে সব সময় কথা বলি, সংগ্রাম করি। যে সংগ্রাম শুরু হয় ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজ পরিবার, প্রিয়জন, বন্ধু থেকে যে প্রচারণা প্রতিবাদী করে তুলে অদম্য প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। কিন্তু আমরা কখনো বলি না বা বলতেও চাই না যে আমাদের অনেকের পরিবারের মধ্যেই রয়েছে এই ধরনের মানুষ, তাই রক্তের বাঁধনকে উপেক্ষা করে এই সংগ্রাম নির্বাক থাকে। কিন্তু আমি যদি আমার নিজের পরিবারেরই পরিবর্তন করতে না পারি তবে এই বুলির অর্থ হবে অন্তসার শূণ্য মাত্র। সময় এসেছে সম্পর্কগুলো রক্তের শিরায় প্রবাহিত হলেও ডিজিটালের যুগে লাভ-ক্ষতির হিসাবের। “আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে” সেই ছোট্ট বেলার মুখস্ত কবিতা যেন এই বৃদ্ধ বয়সেও দুর্বোধ্য লাগে। কারণ তা বাস্তবায়ন করতে পারিনি বলে।

ভালোমানুষ হিসাবে খারাপ মানুষের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করাটাও ভালো মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ বলে আমি মনে করি। সেক্ষেত্রে দুষ্টলোকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়া উচিত প্রথমে নিজেকে নিয়ে, নিজের পরিবারকে নিয়ে। তবেই না সমাজ এবং দেশের উন্নয়ন সম্ভব। আজ আমি এমন একটি পরিবারের বেদনার কথা তুলে ধরতে চাই। যে পরিবার নাম, যশ, অর্থে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শত বর্ষধরে দেশে ও বিদেশে সুনামের সাথে পরিবারিক মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে টিকে রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, ভাইবোন সম্পর্কের বঞ্চনাকারী ও অত্যাচারী এক সহোদর এই পরিবারের স্বচ্চল ফুলের বাগানকে কীটপতঙ্গের মত তিলে তিলে নিঃশেষ করে চলছে। এভাবে নিজ পরিবারের দূর্বল দিক উপস্থাপন করে বা কাউকে ইঙ্গিত করে লেখাটা যদিও নিজের কাছেও সমাচীন নয়। তবে আমি জানি এবং অনুভব করি প্রায় সকল পরিবারেই এমন কতিপয় ব্যক্তির কান্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডে সে পরিবার কতটা বিষণ্নতা, কতটা অসহায়। যেন পূর্ণ চন্দ্রে লাগা গ্রহণ সব রুপালী জোৎস্না এক নিমিশেই হারিয়ে সব অন্ধকারে ঢেকে দেয়। যদি পরিবারের কেউ দরিদ্র না হয় তখন তারা মনে করে এটা প্রকাশ করলে পারিবারিক গুডউইল একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে। এগুলো হয় পারিবারিক ভাবে বসে মিমাংসা করতে হবে নতুবা ভুলে যেতে হবে। পরিবারের গুডউইল ধ্বংস হয় এমন কাজও সঠিক নয়। যে ক্ষতি হয়েছে সেটা পুনরুদ্ধার করাও সম্ভব নয়। তাই গুডউইল নষ্ট করে আরও ক্ষতি ডেকে আনা কি উচিত? পরিবারে বা বংশে কেউ কেউ এমন থাকে। তাদেরকে পারিবারিকভাবে মোকাবেলা করাও একটা দক্ষতা ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি সব কিছু বিচার বিবেচনা করেই আজ সারা দেশের মানুষের কাছে আমার এই বার্তা তুলে ধরছি কারণ বাংলাকে সোনার বাংলা করতে হলে আমাদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে এবং নিজেকে বা নিজের পরিবারকে দিয়ে শুরু করতে হব। দুর্নীতি করে না এমন লোক শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বে খুঁজে পাওয়া যাবে না, তবে পরিমান বা তার মাত্রার ওপর নির্ভর করছে পরিবর্তনের। ছোট ভাই-বোনদের জন্য কিছু করে যদি কোনো বড় ভাই-বোন তা সুদ-আসলে তুলে নেয় এবং সারাক্ষণ কঠিন ভাবে মানসিক অশান্তিতে রাখে তখন ভালোবাসার সম্পর্ক ঘৃণায় রুপান্তরিত হয়। আমার এ লেখা পড়তেই মনে হবে আরে এ তো আমারই পরিচিত এক আপনজনের চরিত্রের একটি অংশ এবং আমি জানি এ বাংলাদেশের লাখো লাখো পরিবারের মনের কথা এবং যা আজ লাখো লাখো পরিবারের কাছে ঘৃণায় পরিনত হয়ে রয়েছে। আজ এই অপ্রিয় সত্যকে তুলে ধরতে এই লিখা তা হোল, অর্থনৈতিক ভাবে ঋণগ্রস্ত ছোট ভাই-বোনের উপর বড়দের জুলুমের পরিমান যখন সীমা লঙ্ঘন করে, এবং ছোটদের প্রতি অত্যাচার এবং অবিচার করতে শুরু করে, তখন ঘৃণা ছাড়া ছোটদের আর কিছু দেবার থাকে না। সে ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয় ভালোবাসা এবং বিনাশ হয় সম্পর্কের । সম্পর্ক তখন আর ভাই-বোনের মত থাকে না, যার প্রমাণ আমার এই লেখা। যেহেতু করব বর্ণনা এমন একটি অপ্রিয় সত্য কথা যা সারা দেশের এক জলন্ত প্রতিচ্ছবি সেহেতু ধরে নেই এই পরিচিত আপনজন আজ সবার কাছে এখন একটি পুরাতন নাম মাত্র। যার ওপর ছিলো ভালো স্মৃতি বহু বছর আগে যখন সে বিয়ে করেনি। তার পর সে মনের অজান্তে হারিয়ে গেছে। সে কিছুই করেনি পরিবারের কারো জন্য। করেছে শুধু নিজেকে লোভি আর গড়েছে তার চারপাশে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রাচীর যা অন্ধকারে বন্ধ করে রেখেছে তার মনুষ্যত্বকে, দিনের পর দিন আর বছরের পর বছর। সামান্যতম ত্রুটি-বিচ্যুতি বড় করে তুলে ধরে সবাইকে নিচু করে তুলে ধরতে কৃপণতা করে না সে।

এই ভদ্রলোকের এখন নিজের পরিবার হয়েছে এবং সে তাই নিয়ে ব্যস্ত। তার ছেলেকে বিদেশে এনে ছয় বছর তার সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে তাকে শিক্ষিত করে কাজ এবং স্থায়ী নাগরিকত্ব দিয়ে এখানকার সমস্ত সুযোগ-সুবিধা করে দেওয়া সত্বেও সে বা তার পরিবার খুশি হয়নি। সে সবার সব কিছু ভোগ দখল করে আসছে এত বছর ধরে, তার পরও সে খুশি নয়। তার সব থাকতেও সে অন্ধের মত পরিবারের সকলের সম্পদ গ্রাস করে চলছে। আজ সে বাকি পরিবারের কাছে ঘৃণার পাত্র হয়েছে। কারণ সে শুধু নিতে শিখেছে, দিতে ভুলে গেছে। আজ এত বছর পর, প্রথম যখন তাকে বলা হয়েছে অন্যের সম্পদ থেকে সরে যেতে তখন সে হয়েছে পাগল। তার দীর্ঘদিন কারো সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় সে পড়ে আছে ১৯৮৫ সালের জগতে। আজ ২০১৮ সাল। সে মাঝখানের এত বছর সব থেকে বঞ্চিত শুধু ভোগদখল ছাড়া। সে শুধু নিয়েছে, দেয়নি কিছু। যার কারণে জং ধরেছে সম্পর্কের এত বেশি যে সেই ভালোবাসার সম্পর্ক এখন হয়েছে “গুড ফর নাথিং”। তাকে শ্রদ্ধা করার মত কিছু কি সে রেখে গেছে? যা দিয়েছিল তার দশ গুন নিয়ে গেছে জোর করে। কিভাবে সে আশা করে ভালোবাসা? বহু বছর ধরে ঘৃণা জমা হয়েছে হৃদয়ে তাই আগুন জ্বলছে শরীরে এখন, “ঠু লেট তা নেভানো”। আজ দুঃখের সাথে জানাতে বাধ্য হলাম সারা দেশের মানুষকে, এমন একটি কুৎসিত চরিত্রের মানুষের কথা। এ ধরণের কুৎসিত চরিত্রের মানুষ এখন বাংলার ঘরে ঘরে। দুর্নীতি, পরিবারকে ঠকানো, মিথ্যাকথা বলা এই গুলোকে কুৎসিত চরিত্রের মধ্যে ধরা হয়েছে।

যে অসৎ ও দুর্নীতিগ্রস্থ তাকে লজ্জ্বা দেওয়া যায় না। যে উলঙ্গ তাকে কি লজ্জ্বা দেবে? আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। সমাজে তুলে ধরতে মিডিয়াতে যেতে হবে কি? পরিবারের গুডউইল অবশ্যই নষ্ট হবে। তখন প্রশ্ন হবে বাবা মাকে নিয়ে। সবাই সফল পিতামাতা হিসেবে যে সম্মান করে তাতে দাগ পড়বে। তা ছাড়া মিডিয়া বিচার করতে পারে না। মিডিয়া মানুষকে ছোট বা বড় করতে পারে। তারচেয়ে বরং ভালো আইনের সাহায্য নেওয়া। পরিবারের সম্মানও কম ক্ষুন্ন হবে। এমন ভাবে যখন ভাবা হচ্ছে ঠিক সেই সময় সেই পরিচিত আপনজন শুধু ঋণের বোঝা ভারি করতে সবার বিরুদ্ধে কম্প্লেন এবং তার যে একটি বড় ক্ষমতা রয়েছে তা দেখানো এটাই ছলছে তার কাজ পরিবারের প্রতি। আজ পাগলের সাথে পাগলামির খেলা শুরু হয়েছে। যদিও ইচ্ছে করছে দানবের নয় মানবের সমাজে ফিরে যেতে। কিন্তু দানব শেষ না করলে এরকম সৈরাচারির জন্ম হতে থাকবে। আর বাড়তে থাকবে সমাজে এবং দেশে এদের সংখ্যা এত বেশি যে, শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হবে মানবজাতিকে। এই ধরণের আপনজন রয়েছে দেশের সর্সত্রে, এখন প্রশ্ন কী ভাবে এদেরকে সৎ চরিত্রে ফিরে আনা সম্ভব? আদোও কি সম্ভব? পারবে কি এরা নতুন করে ভালোবাসা দেখিয়ে প্রমান করতে? পারবে যে তারা সমাজের ও পরিবারের সত্যিকার আপনজন? তাহলে তাকে বা তাদেরকে প্রমান করে দেখাতে হবে, যে অন্যায় তারা অতীতে এবং বর্তমান করছে, তারজন্য তাদেরকে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে, তবেই ক্ষমা, নইলে নয়। যে বা যারা পরিবারকে ভালোবাসেনা, সে বা তারা দেশের শত্রু তাদের থেকে দুরে থাকতে অনুরোধ করছি। বুঝতে নিশ্চয় সহজ হবে এখন কেন সুশিক্ষার জন্য লড়াই আমার? সুশিক্ষার ওপর লিখছি আজ থেকে বছর খানেক ধরে, তাই আজ তুলে ধরলাম এমন একটি পারিবারিক জলন্ত উদাহরণ।

এই সেই বর্ণচোরা মুখোশধারী মানুষ নামের দানবেরা যারা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুরো ফ্যামিলিকে ঠকিয়ে চলছে দীর্ঘ বহু বছর ধরে। কী করে তারা দাবী করে সবার ভালোবাসা? শ্রদ্ধা? তারা তো ভুলে গেছে এসব ভালো কথা। কারন কী? কারন ভালোবাসার মৃত্যু হয়েছে ৪০ বছর আগে। তাদের সব হয়েছে, তারা সব পেয়েছে। কিন্তু তারা তাদের ভালোবাসাকে কবর দিয়েছে। কিন্তু কেন? সে এখন লেগেছে পরিবারের বিভিন্ন ব্যক্তির চরিত্র নিয়ে কথা বলতে, সে কি ভুলে গেছে তার অতীত? তাকে যদি বোনেরা নারীনির্যাতন এবং চরিত্রহীনতার অপরাধে কোর্টে হাজির করে, ভেবেছে কি এর পরিনতি কি হবে? তার এই অধঃপতনের কারনে দেশে যেতে মন চাই না। এদের আমি ঘৃণা করি। জানিনে কত জন বাংলাদেশী এমনটি বেদনা নিয়ে বেঁচে আছে! আজ এত বছর পরে কলম ধরতে বাধ্য হয়েছি শিক্ষিত মানুষরুপী লোভী এক মানুষের অধঃপতনের কথা তুলে ধরার জন্য। আমি এখন এদেরকে নিয়ে গর্ব করতে ভুলে গেছি। একজন শিক্ষিত এবং ক্ষমতাবান ব্যক্তি যে শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে, এমন লোভি আপনজনকে কেউ চাই না। শিক্ষার আলোতে গড়া ভালোবাসাময় সাধারণ পরিবার চাই। ধ্বংস করতে চাই সুশিক্ষা এবং ভালোবাসা দিয়ে সেই মুখোশধারী ও লোভি আপনজনকে এবং একইসাথে ফিরে পেতে চাই অতীতের সেই আদর্শ ও সুখি পরিবারকে। সুশিক্ষা এবং মানবতার ধ্বংস নয়, ধ্বংস হোক তার নিজের মধ্যের কুশিক্ষা এবং সে ফিরে পাক তার মানবতা ও জয় হোক ভালোবাসার এমনটি কামনা করছি।

রহমান মৃধা, দূরপরবাস সুইডেন থেকে।