বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ আইন (১৯৫২) অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন পাহাড় কাটা যাবে না। অথচ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লোলুপ দৃষ্টি, রাজনৈতিক দাপট ও সরকারের উদাসীনতার কারণে হাটহাজারী উপজেলাধীন চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশন (চসিক) এর ১নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকায় যেন পাহাড় কাটার ধুম পড়েছে। সরকার প্রদত্ত নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্য ক্রমাগত পাহাড় কেটে গড়ে তুলছে কাঁচা ও আধা-পাকা আবাসস্থল। ফলে একদিকে ধ্বংস হচ্ছে এলাকার ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ হারাচ্ছে ভারসাম্য। অন্যদিকে পাহাড়ে বসবাসরত প্রাণিকুল তাদের নিরাপদ আবাসস্থল হারানোর কারণে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পতিত হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নির্বিকার হওয়ায় এ ব্যাপারে কোনো প্রকার কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না বলে দাবি করছেন স্থানীয় জনসাধারণ।

চসিক এর ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড ঘুরে স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে আলাপকালে পাহাড় কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী এ প্রতিবেদককে জানান, কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক দাপট দেখিয়ে প্রভাবশালী স্থানীয় একটি চক্র প্রশাসনের কর্তাদের তোয়াক্কা না করে নন্দির হাটের পশ্চিমে জেসন পোলট্রি ফার্ম সংলগ্ন ‘তাহের শাহ’ নামক পাহাড়টি প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে কেটে বসবাসের জন্য গড়ে তুলেছে কাঁচা ও আধাপাকা আবাসস্থল। জনৈক মো. জহির উদ্দিন চৌধুরীর মালিকানাধীন (আংশিক) উক্ত পাহাড়ের পূর্ব পার্শ্বে ইতিমধ্যে ওই চক্রটি আবাসস্থল তৈরী করার কাজ শুরু করেছে এবং কিছু দিনের মধ্যে কর্তনকৃত পাহাড়ের মাটি বিক্রি করবে। তবে উক্ত পাহাড়ের মালিক মো. জহির উদ্দিন চৌধুরী মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, পাহাড় কেটে আবাসস্থল তৈরীর সাথে তিনি জড়িত নয়। বিগত ৫ বছর আগে ওই পাহাড়ের মালিকানা (প্রায় ১ একর) বিক্রি করে দিয়েছেন। কে বা কারা এ কাজ করছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক জনের কাছে বিক্রি করেছি। তারা কাকে দিয়ে এ কাজ করাচ্ছে তা আমার জানা নাই। সরেজমিন গেলে নন্দিরহাট এলাকার মো. সোলায়মান (৫৮) নামে এক প্রবীণ বাসিন্দা এ প্রতিবেদককে বলেন, এক সময় সিটি কর্পোরেশনের ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকায় পাহাড়ের অন্যতম সৌন্দর্য ছিল হরিণ, বাঘ, ভাল্লুকসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। চট্টগ্রামের শহরের লাগোয়া হওয়ার কারণে অনেকেই এ পাহাড় বেষ্টিত এলাকাটিকে বনভোজনের উপযুক্ত স্থান হিসেবে ব্যবহার করত। কিন্তু অবৈধভাবে অবাধে পাহাড় কেটে আবাসস্থল নির্মাণ করার ফলে ওই এলাকার পরিবেশ হারাচ্ছে তার প্রাকৃতিক ভারসাম্য। এছাড়া পাহাড় উজাড় হওয়ার কারণে পাহাড়ে বসবাসরত প্রাণিকুল হারাচ্ছে তাদের নিরাপদ আবাসস্থল। এতে পাহাড়ের অন্যতম সৌন্দর্য বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীগুলোকে এখন আর দেখা যায় না বলে স্পটটি হারাতে বসেছে তার অতীত ঐতিহ্য।

তাছাড়া একই ওয়ার্ডেরর চৌধুরী হাটের পশ্চিমে সাধুর পাহাড় সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে অবৈধভাবে সুতার পাহাড় (প্রকাশ ফুতর পাহাড়) কেটে সমতল করে প্লট বিক্রি করে আরেকটি প্রভাবশালী চক্র রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রাছায়ায় একটি চক্র দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভূমিহীন ও অসহায় ১৫-২০ পরিবারের কাছে থেকে ওই পাহাড়ে প্লট দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। ওই পাহাড়ে ৩ শতক পরিমাণ খাস জমির প্লটের মূল্য নিয়েছে চক্রটি ২-৩ লাখ টাকা। পাহাড় কর্তন করে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি সাধনের ব্যাপারে জানতে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (চট্টগ্রাম অঞ্চল) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন এর মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি সচিব স্যারকে নিয়ে ব্যস্ত আছে বলে এ প্রতিবেদককে জানান।