উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে ক্যান্সারে মৃত্যুর প্রথম পাঁচটির মধ্যে এটি অন্যতম। তবে এ ক্যান্সার মোকাবেলায় চিকিত্সা অপ্রতুল। প্রয়োজনীয় ক্যান্সার সেন্টারের পাশাপাশি জনবল সংকট রয়েছে। তাই প্রতিকারের চেয়ে এ রোগ প্রতিরোধে গুরুত্ব দিতে হবে।রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে দিনব্যাপী ‘তৃতীয় ঢাকা হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার কনফারেন্স ২০১৮’ এর উদ্বোধনী সেশনে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরা এসব কথা বলেন। হেড অ্যান্ড নেক অনকোলোজি গ্র“প আয়োজিত এ সম্মেলনে হেড-নেক ক্যানসারে সাম্প্রতিক প্রযুক্তি ও চিকিত্সাব্যবস্থার আধুনিকায়ন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় চার শতাধিক ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, চিকিত্সক ও শিক্ষকেরা অংশ নেন।

সম্মেলনের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, হেড অ্যান্ড নেক সংক্রান্ত সংক্রান্ত রোগগুলো অনেক জটিল। চিকিত্সার ক্ষেত্রে এসব রোগীদের দেরি হয় কারণ চিকিত্সক বুঝতে পারেন না কীভাবে চিকিত্সা দেবেন। অস্ত্রোপচারেও অনেক ঝুঁকি আছে।উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশ সোসাইটি অব হেড অ্যান্ড নেক সার্জনসের সভাপতি অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের জন্য হেড-নেক ক্যান্সার বড় একটি বোঝা। দেশের মোট ক্যান্সার রোগের ৩২ থেকে ৩৫ শতাংশ হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার। তবে এ রোগ মোকাবেলার জন্য আমরা এখনো প্রস্তুত না। আমাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ও জনবল বাড়াতে হবে। দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভাগ স্থাপনে এবং জনবল নিয়োগের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বিবেচনায় আনতে হবে।

সম্মেলনের সভাপতি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এ রোগের চিকিত্সায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। ১০ বছরে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। দেশে মাত্র ২০টি রেডিওথেরাপি সেন্টার আছে। অথচ প্রয়োজন ১৫০টি সেন্টার। দেশে ক্যান্সার চিকিত্সক মাত্র ১৫০ জন যেখানে এখনই ৩০০ জন প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পদ তৈরি করে নিয়োগ দিতে হবে। রোগ প্রাথমিকভাবে শণাক্ত করা গেলে সার্জারি বা রেডিওথেরাপিতে দ্রুত সারবে। তবে সবার আগে তামাক বা তামাকজাত পণ্য সেবন বাদ দিতে হবে।সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে প্রোটন থেরাপি, ইমিউনো থেরাপি এবং সার্জিক্যাল অনকোলোজিতে নতুন প্রযুক্তি, চিকিত্সাব্যবস্থা তুলে ধরা হয়। সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরা বলেছেন, তামাক, জর্দা খাওয়ার কারণে গলা, জিহ্বা, স্বরনালী, মাথায় নানা ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।এ নিয়ে এশিয়ার দক্ষিণ অঞ্চল বা বাংলাদেশে কোনো জরিপে নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতিবছর ৫ লাখ ৫০ হাজার মানুষ হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে, এর মধ্যে বছরে মারা যায় ৩ লাখ ৮০ হাজার জন।