ছয় মাসের জন্য পর্নোগ্রাফির সব ওয়েবসাইট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সচিব, আইন মন্ত্রণালয় সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয় সচিব, বিটিআরসি এবং সকল মোবাইল অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট ৯ জনকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

এছাড়াও পর্নোগ্রাফিযুক্ত ওয়েবসাইট স্থায়ীভাবে কেন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে ফেসবুক এবং সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বয়স নির্ধারণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর (আইডি) সংযুক্তিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং মোবাইল অপারেটরগুলোর পক্ষ থেকে ইন্টারনেটের স্বল্প মেয়াদী ইন্টারনেটের লোভনীয় অফার বন্ধে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৯ নভেম্বর) পর্নোগ্রাফি বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ অন্তর্র্বতীকালীন এ আদেশদেন।আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট হাসান তারেক, ব্যারিস্টার মোজাম্মেল হক ও ব্যারিস্টার মাজেদুল কাদের।শুনানিকালে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য আদালতে তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজধানীতে ৭৭ শতাংশ স্কুলগামী শিক্ষার্থী পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে।

এ সময় আদালত বলেন, এটা শুধু শিশুদের জন্য নয়, এর মাধ্যমে সমাজের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত। এটি নতুন একটি বিষয়। তাই এটিকে জাতির স্বার্থে গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।পরে আদালত থেকে বেরিয়ে আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব বলেন, ইন্টারনেটে প্রবেশ সহজলভ্য হওয়ায় আমাদের যুব সমাজ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা এ কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা পড়াশোনা বাদ দিয়ে পর্নোগ্রাফি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। যা জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে। এছাড়াও পর্নোগ্রাফির ফলে ধর্ষণসহ বিভিন্ন যৌন অপরাধে তারা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তাই এসব ওয়েবসাইট বন্ধ হওয়া অত্যন্ত খুবই জরুরি, এর জন্য আমরা রিট করেছি।

তিনি আরও বলেন, রিটের শুনানিতে আমরা আদালতকে জানাই, ইতিমধ্যে ভারতে ৮৫৭টি পর্ন ওয়েবসাইট বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই দেশের মোবাইল অপারেটরগুলোও পর্ন মুক্ত। আদালত আমাদের বক্তব্য শুনে রুল সহ আদেশ দেন। যার ফলশ্র“তিতে আজকের আদেশ যুগান্তকারী হয়ে থাকবে।এর আগে গত ১১ নভেম্বর মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন, চাঁদপুরের বাসিন্দা মো. রাসেল হোসেন এবং ময়মনসিংহের খায়রুল হাসান সরকারের পক্ষে সব পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে প্রযুক্তিতে আসক্ত শিশু-কিশোর’ এবং ‘ডিজিটাল কোকেন’-এ সর্বনাশ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়।