রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করর্পোরেশনের ৭৫ নং ওয়ার্ডের খিলগাঁও থানাধীন ত্রিমোহনীর নাসিরাবাদ এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক তার দিয়েই চলছে বিদ্যুৎ বিতরণের কাজ। তার উপর কিছু অসাধু ব্যাক্তি অবৈধভাবে বাঁশের হুক লাগিয়ে ব্যবহার করছে বিদ্যুৎ। এতে করে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ,নাসিরাবাদের মধ্যপাড়ায় সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্ত হওয়ায় এতে অধিকাংশ বৈদ্যুতিক খুঁটি সড়কের মাঝে পড়ে যায়।এখন এসব খুঁটি ঘেঁষে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যানবাহন চলাচল করছে। স্থানীয় বাসিন্দা শাওন অভিযোগ করেন,ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ডেমরা ডিভিশনের এক কর্মকর্তাকে কয়েক মাস পূর্বে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দেয়া হয়েছে খুঁটি সরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। একটু অসাবধানতায় ঘটতে পারে প্রাণহানির মত দুর্ঘটনা।

নাসিরাবাদ ইউপি মেম্বার আতাবর রহমান ফোকাস বাংলা নিউজকে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো সড়কের মাঝখান থেকে অপসারণ ও বাঁশের খুঁটিগুলো থেকে জরাজীর্ণ তার গুলো ফেলে দিয়ে নতুন তার বসানোর জন্য আবেদন করা হলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শুধু নাসিরাবাদ এলাকায় নয়, নাগদার পাড় ,পশ্চিম নন্দীপাড়া, পশ্চিম মাদ্রাসা সড়ক ,গোলাবাড়ি ,ইসলামবাগ,জোড়াভিটা,আঙ্গুর জোড়া,শেখেরজায়গা,সিপাইবাগ,মেরাদিয়া, বড় বটতলা,পূর্ব গোড়ান, বাবুর জায়গা এলাকায় বাশের খুঁটিতে জরাজীর্ণ তার দিয়ে চলছে বিদ্যুৎ বিতরণের কাজ। এতে করে একটু বৃষ্টি হলেই ঐ এলাকাগুলোতে ঘটছে বিদ্যুৎ বিচ্যুতির মত ঘটনা। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, জরাজীর্ণ তার আর বাঁশের খুঁটির কারণে বিদ্যুৎ বিচ্যুতির ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ দিয়েও সেবা পাওয়া যায় না।অপরদিকে এলাকাগুলো আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান,বনশ্রী,বাসাবো,খিলগাঁও,মানিকনগর,ডেমরা,কামরাঙ্গীরচর ও শীতলক্ষ্যা ডিভিশনে এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করলে নিয়ম নীতি উপেক্ষা করেই দেয়া হয় সংযোগ।তারা আরো জানান, ৩০ ফিটের উর্দ্ধে হলেই সংযোগ দেয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন । সেই ক্ষেত্রে গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হলে ডিপিডিসিকে দিতে হয় ডিপোজিটের অর্থ। অথাৎ গ্রাহকের টাকা দিয়ে গ্রাহককে বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন নির্মাণ করে সংযোগ দেয়া হয়। যে কারণেই গ্রাহক বাধ্য হয়ে উৎকোচ দিয়েই সংযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। এতে করে দিন দিন বাড়ছে বাশেঁর খুঁটির ব্যবহার।

নাম প্রকাশ না শর্তে ডিপিডিসির এক কর্মকর্তা জানান,সম্প্রতি শীতলক্ষ্যা ডিভিশনের আওতাধীন ফতুল্লার কাশিপুরে নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে একই স্থাপনায় বিপুল টাকা বকেয়া থাকার পরও উৎকোচের বিনিময়ে দেয়া হয়েছে একাধিক মিটার ।

ডিপিডিসির পরিচালক (প্রকৌশল) প্রকৌশলী রমিজ উদ্দিন সরকার জানান, এ সংকট মোকাবেলায় একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ডিপিডিসির একটি বৃহৎ প্রকল্প গত একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন। সেই প্রকল্পের ১৯ শ ৩৫ কোটি টাকা আগামী তিন বছরের মধ্যে কার্যকরী হবে।এই প্রকল্পের আওতায় আমরা যদি কাজ গুলো যদি সম্পন্ন করতে পারি তবে আর কোন বাশেঁর খুটি থাকবে না।

এ ব্যাপরে ডিপিডিসির কর্মকর্তাদের অদক্ষতার অভিযোগ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন,কাস্টমার সার্ভিস নেই বলে চলে।এজন্যএগুলোকে আধুনিকরন করার জন্য আমরা টেকনোলজি ব্যবহার করার জন্য বলছি। অনলাইন সাভির্স কিভাবে দেয়া যায়,একটা ইউনিক নাম্বার থাকবে,কতদিন যাবৎ বলে আসছি,সেটাও তারা করতে চায় না। অথাৎ তারা টেকনোলজির দিকে যেতে চায় না। কারণ তাদের গাফিলতি গুলো ধরা পড়বে ।

এদিকে জ্বালানী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গ্রাহকের বিদ্যুৎ সেবার ক্ষেত্রে অনলাইন সার্ভিস আরো দ্রুততার সাথে করতে হবে। আর বাশেঁর খুঁটির বদলে জরাজীর্ণ বিদ্যুৎ বিতরণী লাইনগুলো নতুনভাবে স্ংস্কার করা জরুরী ।