আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গ্রহণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার চলাকালীন এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, তোমরা আমার ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দাও। আমি যা করব পার্টির স্বার্থেই করব, তোমাদের স্বার্থেই করব। সময়মতো আমি আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আমার চেয়ে দুঃখী আর কেউ নেই। তাই আমি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তা তোমরা গ্রহণ করবে তো?এরশাদ আরও বলেন, ‘আল্লাহ সুযোগ দিয়েছেন আমাদের। আমাদের তো বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা। দেশে এখন দুটি দল মাত্র- আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। আর কোনো দল নেই। আমার দুঃখ-কষ্টের কথা স্মরণ করে আমি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব তা তোমরা গ্রহণ করবে বলে আশা করি।

তিনি বলেন, এই পার্টির জন্য আমার চেয়ে কেউ এত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে নাই। একটা দিনের জন্যও মুক্ত ছিলাম না আমি। এখনও নই। একটা দিনের জন্যও শান্তিতে ছিলাম না। এখনও মামলা চলছে আমার। মামলার নিষ্পত্তি হয় নাই। এই মামলার ভার মাথায় নিয়ে আমি তোমাদের নেতৃত্ব দিয়েছি।সাড়ে ৭ বছর জেলে ছিলেন জানিয়ে এরশাদ বলেন, অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেছি। তাও বেঁচে আছি। আমার অসুখ হয়েছে তারা চিকিৎসা করে নাই। খালেদা জিয়া বলেছিল, মরতে দাও এরশাদকে। এরশাদ মরে নাই।

তিনি আরও বলেন, আমি সৎপথে ছিলাম, সঠিক পথে ছিলাম। সে জন্য জাতীয় পার্টি আজ বেঁচে আছে। নেতাকর্মীদের দেখে নিজে উৎসাহিতবোধ করছেন বলেও জানান এরশাদ।তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের রহমত করেছেন। জাতীয় পার্টি আবার জেগে উঠেছে। বক্তৃতার শেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের সব কষ্ট এবং বেদনা দূর হয়ে গেল বলে জানান সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।তিনি বলেন, তোমরা ঘরে ফিরে যাও, ভালো থাক। আমার জন্য সবাই দোয়া কর।

এরশাদ বলেন, দেশ, পার্টি এবং দলের নেতাকর্মীদের কথা বিবেচনা করেই ৩০০ আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে। আমি ৩০০ আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করব, এখানো আর কারো দায়িত্ব নেই। আমি দেখতে চাই ৩০০ আসনেই জাতীয় পার্টির যোগ্য প্রার্থী আছে। প্রাথমিকভাবে ৩০০ প্রার্থী ঘোষণা করব। তারপর সম্মিলিত জাতীয় জোটের সঙ্গে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে। রাজনৈতিক মেরুকরণে যদি অন্য কোনো জোটে যেতে হয়, আমি এককভাবে সিদ্ধান্ত নেব। নেতাকর্মীদের বলেন, তোমরা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাবে, সময়মতো আমি সিদ্ধান্ত জানাব। বলেন, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব, আশা করি তোমরা তা মেনে নেবে। আমাদের সুদিন এসেছে, জাতীয় পার্টি আবার জেগে উঠেছে। ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পর এবার সর্বোচ্চ মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। এটা আমাদের বড় অর্জন। জাতীয় পার্টি এখনো বেঁচে আছে।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে বাঁচিয়ে রেখেছি, আজকের দিনটির জন্য। আজ মাঠে আছে আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টি। আর কোনো দল নেই মাঠে।সমাপনী বক্তব্যে পার্টির সিনিয়র কো- চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, আজ আমাদের আনন্দের দিন। অনেক নবীন এখানে উপস্থিত। দেখে বেশি খুশি হলাম। জাপার ক্ষমতার সময় যে উন্নয়ন হয়েছে, তা আর কেউ করতে পারেনি।তিনি বলেন, সবাই তো আর মনোনয়ন পাবেন না, এক এলাকায় একজন প্রার্থী হবেন, বাকি সবাইকে জাপার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।গত ১১ নভেম্বর থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হয়। চলে পাঁচ দিন। এরই ধারাবাহিকতায় মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ আজ শুরু হয়েছে। জাতীয় পার্টি থেকে এবার ২৮৬৫ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। প্রাথমিকভাবে সেখান থেকে বাছাই করে ৭৮০প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। সেখান থেকে ৩০০ আসনের প্রার্থী নির্ধারণ হবে। তবে রাজনৈতিক কারণে দলের চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা সবাই মেনে নেবেন- মনোনয়ন পওয়ার ক্ষেত্রে এমন শর্তও যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।