নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাদ পড়েছেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সরকারদলীয় এমপি আবদুর রহমান বদি। ওই আসনে নৌকার মাঝি হচ্ছেন তার স্ত্রী শাহীনা আক্তার চৌধুরী।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বিতর্কের কারণে কক্সবাজারের আব্দুর রহমান বদি ও টাঙ্গাইলের আমানুর রহমান খান রানাকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না।’

মূলত উখিয়া-টেকনাফে বদির জনপ্রিয়তার বিকল্প না থাকায় বদির স্ত্রীকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। পরোক্ষভাবে বদির জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে এই আসনে জয় পেতে চায় আওয়ামী লীগ। আজ-কালের মধ্যে দল থেকে এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।

উখিয়া-টেকনাফের দুইবারের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে নিয়ে বিপাকে আছে আওয়ামী লীগ। একদিকে বদির বিরুদ্ধে মাদকের পৃ্ষ্ঠপোষকতা নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্ক, অপর দিকে নিজ এলাকায় বদির আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। এই আসনে জেতার মতো বদির বিকল্প হিসেবে কোনো যৌগ্য প্রার্থীও পাচ্ছে না আওয়ামী লীগ তাই বদির স্ত্রী শাহীনা চৌধুরীকে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড।

বিভিন্ন সময় বদিকে নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে গত ১০ বছরে দলকে প্রতিনিয়ত বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারকে। এছাড়া, টেকনাফের স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ বদির বিরোধীতা করে আসছে। বিতর্ক এড়াতে বদির পরিবর্তে তার স্ত্রী শাহিনা চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে।

উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মাহাবুবুল আলম বলেন, বদির বিরুদ্ধে ইয়াবার সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ নেই। বদির বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগই মিথ্যা। তাই কক্সবাজার-৪ আসনে বদিকেই মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান তিনি।

এই আসন থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ জন প্রার্থী নৌকার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৪/৫ জন প্রার্থী দলগতভাবে শক্তিশালী। কিন্তু দলীয় অবস্থান শক্ত হলেও ভোটারদের মাঝে জনপ্রিয়তায় বদির সমতুল্য কেউ নেই বলে দাবি বদিভক্তদের। বদির স্ত্রী শাহীনা চৌধুরী স্বামীর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে লড়াই করতে পারবেন।

কে এই শাহীনা আক্তার চৌধুরী :
শাহীনা আক্তার চৌধুরী কি শুধুই সাংসদ বদির স্ত্রী? না,তার আরও অনেক বড় পরিচয় আছে। শাহীনা চৌধুরী উখিয়ার ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার বাবা নুরুল ইসলাম চৌধুরী ঠাণ্ডা মিয়া ছিলেন উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

তার বড় ভাই হুমায়ুন কবির চৌধুরী জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতা। ছোটভাই জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং রাজাপাালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তার চাচা হামিদুল হক চৌধুরী উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ। চাচী অর্থ্যাৎ হামিদুল হক চৌধুরীর স্ত্রী নিগার সুলতানা উখিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।

শাহীনা আক্তার চৌধুরী ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ান। পরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহীনা আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘দল থেকে এখনো মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়নি। আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে নৌকার মনোনয়ন দেন, তাহলে নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য যা করার সব করবো।’