গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার এবার নামছেন ভোটের মাঠে। উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের রৌমারি, রাজিবপুর ও চিলমারী নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-৪ আসন থেকে তিনি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
তবে কোনো দল থেকে নয়, স্বতন্ত্র হিসেবে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন এক সময় ছাত্রলীগের রাজনীতি করা ইমরান।বুধবার এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, যেহেতু আমার নিজ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, যেহেতু আমার এলাকায় কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি, তাই দারিদ্রের হার বেড়েই যাচ্ছে। যেহেতু আমার এলাকা উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার এবং পূর্ববর্তী জনপ্রতিনিধিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন, তাই আমি আমার নির্বাচনী এলাকা কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী, রাজিবপুর, চিলমারী) থেকে সাধারণ মানুষের পক্ষে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে ২০১৩ সালে শাহবাগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর থেকে ইমরান এইচ সরকার বাংলাদেশে পরিচিত মুখ। তার জন্ম ১৯৮৩ সালের ১৪ অক্টোবর।

রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নেওয়া ইমরান ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগে যুক্ত ছিলেন। ‘ইয়ুথ ফর পিস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ বা ওয়াইপিডি নামের একটি সংগঠনও করতেন তিনি, যার মূল লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি।ওই কাজের জন্য প্রজন্ম ব্লগ’ গঠন করে ওয়াইপিডি। অবশ্য ইমরান নিজে খুব বেশি ব্লগ লেখেননি।যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক হিসেবে ইমরান গণজাগরণ মঞ্চে সম্পৃক্ত হলে তাকে মুখপত্রের দায়িত্ব দেন এ আন্দোলনের সংগঠকেরা।

ওই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশ-বিদেশে পরিচিত হয়ে ওঠেন ইমরান। তবে এরপর নানা সময়ে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা, কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নেমে ক্ষমতাসীনদের বিরাগভাজন হন তিনি।শাহবাগে বিক্ষোভের স্লোগানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবমাননার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন একজন ছাত্রলীগ নেতা। ওই মামলার শুনানিতে গিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে তিনি ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলারও শিকার হন। পরে মামলাটি হাই কোর্ট খারিজ করে দেয়।গত ৬ জুন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে শাহবাগে সমাবেশ করতে গেলে ইমরানকে ধরে নিয়ে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয় র‌্যাব। জুলাই মাসে তাকে বিদেশে যেতেও বাধা দেওয়া হয়। অবশ্য হাই কোর্টের আদেশ নিয়ে পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে আসেন।এর মাঝে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মেয়ের সঙ্গে ইমরানের বিয়ে হলে তার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার গুঞ্জনও শোনা যায়। তবে ওই সংসার ভেঙে যায় এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই। যে আসন থেকে ইমরান ভোট করতে চান, সেই কুড়িগ্রাম-৪ এক সময় জাতীয় পার্টির এলাকা হিসেবেই পরিচিত ছিল। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে ওই আসনের জাতীয় পার্টির লাঙ্গলই জয় পেয়েছে। ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে এমপি হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের জাকির হোসেন। তবে ২০১৪ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টির ( জেপি) প্রার্থী রুহুল আমিন সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পান।