সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে শিখা অনির্বানে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বুধবার সকালে এ দিবস উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সেনানিবাসে পৌঁছলে তিন বাহিনীর প্রধান ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার তাদের স্বাগত জানান।

রাষ্ট্রপতি শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল এসময় সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানায়, বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। পরে রাষ্ট্রপতি শিখা অনির্বাণ চত্বরে রাখা পরিদর্শন বইয়ে সই করেন।রাষ্ট্রপতির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে শহীদ সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় গার্ড অফ অনার দেয়। প্রধানমন্ত্রীও পরে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের পর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। প্রতিবছর দিনটি সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে তারা।সশস্ত্র বাহিনী দিবসের বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা সশস্ত্র বাহিনী জাতির অহংকার ও গর্বের প্রতীক। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতাসহ জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
কেবল দেশেই নয়, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে পেশাগত দক্ষতা, সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্ব করে চলেছেন জানান তিনি।রাষ্ট্রপতি বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ নেতৃত্বের প্রতি পরিপূর্ণ অনুগত থেকে কঠোর অনুশীলন, শৃঙ্খলা, পেশাগত দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে তাদের গৌরব সমুন্নত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনী দিবসের বাণীতে বলেন, আমরা ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সশস্ত্রবাহিনীর আধুনিকায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীকে দেশে ও বিদেশে উন্নততর প্রশিক্ষণ প্রদানসহ আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করছি।

জাতির পিতার নির্দেশে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমসমূহ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানান তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি, সশস্ত্রবাহিনীর প্রতিটি সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বপালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবেন।সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সারাদেশে সেনা নিবাস, নৌ ঘাঁটি ও স্থাপনা, বিমান বাহিনী ঘাঁটিসহ তিন বাহিনীর অধীনের বিভিন্ন স্থাপনায় নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।ফজরের নামাজের পর দেশের সব সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি ও বিমান ঘাঁটির মসজিদে বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে এ দিনের কর্মসূচির সূচনা হয়। বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে তিন বাহিনী প্রধানরা নিজ নিজ বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা/তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেবেন।ঢাকা ছাড়াও বগুড়া, ঘাটাইল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, রংপুর, খুলনা ও রাজেন্দ্রপুর (গাজীপুরসহ) সেনানিবাসে সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে বলে আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।দিনটি পালনে ঢাকার বাইরে, দেশের অন্যান্য সেনা গ্যারিসন, নৌ জাহাজ ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটিতেও বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।ঢাকা, খুলনা, চাঁদপুর, বরিশাল ও চট্টগ্রামে বিশেষভাবে সজ্জিত নৌবাহিনী জাহাজগুলো বেলা ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সবার দেখার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর পরিচালনাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।