নর-নারীর যৌন মিলনে নারীর গর্ভে ধারণ করে এক জীবন যা আস্তে আস্তে নারীর গর্ভে মানুষের পরিপূর্ণতা লাভ করে পৃথীবিতে ছোট্টশিশু হয়ে জন্ম গ্রহণ করে। তারপর তিলে তিলে মানব বা দানবের রুপ ধারণ করে নির্ভর করে তার প্রশিক্ষণের ধরণের ওপর। এখানে যৌন মিলন থেকে শুরু করে জীবনের শেষ অব্দি সময়টিকে একটি প্রসারিত সময় প্রক্রিয়াকরণ বলা যেতে পারে। এর প্রক্রিয়াকরণের পেছনে রয়েছে স্টেপ বাই স্টেপ কর্মের সমন্বয়। একই ভাবে ডিজিটাল টেকনোলজির যুগের উপরও রয়েছে একটি স্টেপ বাই স্টেপের সমন্বয় এবং শেষে সৃষ্টি হয়েছে ডিজিটালাইজেশন। যে বা যারা এর পেছনে সময়, কর্ম এবং দক্ষতা দিয়েছে এবং তারা যে ভাবে ডিজিটালের কাজ কর্ম এবং ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল তেমনটি কিন্তু না যারা হঠাৎ এর ব্যবহার বা সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে।এক্ষেত্রে ধরা যেতে পারে বাংলাদেশকে একটি ভালো উদাহরণ হিসাবে যদি তুলনা করা হয় সুইডেনের সাথে। আজকের খোলামেলা আলোচনায় তুলে ধরব কিছু বাস্তবতার ওপর অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা যা আশা করি আমার দৈনিক শিক্ষার কনসেপ্টের মধ্যে পড়বে।

আমার ছোট বেলার শুরুতেই অনুপ্রেরণা জেগে ছিল দিনের স্বপ্নে যে বিদেশে যেতে হবে পড়াশোনা করতে। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে অনেক বছর ধরে নিজেকে তৈরি করতে নানা ধরণের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছি। পরিশেষে সুইডেনে এসে এদের কালচার এবং প্রশিক্ষণের সমন্বয়ে নিজেকে তৈরি করে বিশ্বমানের ওষুধের কোম্পানিতে কৃতিত্বের সাথেই কাজ করেছি যা ছিলো আমার স্বপ্নের সাথে জড়িত কর্মের ফলাফল। এ পর্যায়ে আসতে অঢেল পরিশ্রম, ত্যাগ ও সততার সাথে অধ্যাবসায় ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে হয়েছে আস্তে আস্তে তাই কোনরকম ভারসাম্যহীন অবস্থার সৃষ্টি হয়নি কখনও। সুশিক্ষা এবং মানবতা এটা একটি প্রসেস যা ধীরে ধীরে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মত তৈরি করতে হয়। সমাজে প্রযুক্তিগত চিন্তাধারা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং তা মানবজীবনের জন্য সুস্থ পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধা দিতে থাকে। পক্ষান্তরে, দেখা যায় যারা কোন প্রস্তুতি ছাড়াই, হঠাৎ করেই অন্যের সাহায্যে, একই দেশে বা অন্য দেশে এসে আর্থিক সফলতা এনে থাকে স্বল্প সময়ের মধ্যে, এদের সুশিক্ষা ও আত্নবিশ্বাসের অভাবে এরা এদের মনুষ্যত্বের ভারসাম্যতা হারাতে থাকে এবং বঞ্চিত হয় সুশিল সমাজ থেকে। এ শ্রেনীর মানুষের আচরণে প্রায়ই লক্ষনীয় মানবিকতার অনুপস্থিতি এবং এরা সচারচর অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী এক তলা শুণ্য কলসির মত। এরা সমাজে গ্যাপের শিকার এবং মানব দেহধারি এক দানব।

যারা জীবনে কোন ফোন ই ব্যবহার করেনি, তাদের জন্য স্মার্ট ফোনের উপযুক্ত অ্যাপ্লিকেশনের আশা করা সঠিক নাও হতে পারে কারণ তারা টেকনোলজিক্যাল গ্যাপের শিকার। সুইডেন টেকনোলজিতে ফ্রন্ট পেজে রয়েছে সর্ব ক্ষেত্রে। এদের টেলি কমিউনিকেশন থেকে শুরু করে মডার্ন যন্ত্রপাতি বিশ্বজুড়ে যথেস্ট প্রভাব বিস্তার করে আছে। টেকনোলজির আবির্ভাবের সঙ্গে তার ব্যবহার সম্পর্কে সাধারণত এরা যথেস্ট সচেতন। সুইডেনের যে কোনো সেক্টরই হোক না কেনো যেমন ব্যাংক, কোর্ট, স্কুল, হাসপাতাল, দুর্নীতি বিভাগ বিদ্যুৎ বা টেলিফোন অফিস, যেখানের কথা বলি না কেনো, কোথাও কোনো ছিঠি দিলে তারা যে চিঠি পেয়েছে সে বিষয় প্রথম নিশ্চিত করবে একই সাথে জানাবে কবে নাগাদ যোগাযোগ করবে। নাগরিক তার মৌলিক অধিকার থেকে কখনো বঞ্চিত হয় না। গনতন্ত্রের প্রথম কাজ তা হোল মিউচুয়াল রেসপেক্ট এবং তা তারা সর্বত্রে করে থাকে। কাউকে ফোন করলে বা এস এম এস করলে তারা ঠিকই ফিরে আসে। বাংলাদেশে অফিসিয়ালি কারো সাথে যোগাযোগ করলে বা কোথাও চিঠি পত্র দিলে জানার ওপায় নেই যে চিঠি আদৌ পৌছিল কিনা তা জানানোর কোনো দরকার আছে বলে তারা মনে করে না। কিন্তু কেন?

বাংলাদেশে নিঃসন্দেহে বলতে হবে ডিজিটালের যুগে স্বল্প সময়ের মধ্যে অল্প খরচে পুরো সুযোগ সুবিধা রয়েছে।এখানে টেকনোলজির বেস্ট প্রাকটিসের ব্যবহারের সঙ্গে মানুষের ক্ষমতা রয়েছে সত্বেও কেনো সুইডেনের মত করে কমিউনিকেশনকে উন্নত করছেনা? সর্বপরি হাজার কোটি টাকা খরচ করে স্যাটেলাইট মহাশূন্যে পাঠানো নিশ্চিত লোক দেখানোর জন্য নয়, বা নিজের দেশের সমস্যার সমাধান না করে বাইরে রফতানির চিন্তা করাটা অনেকটা নবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনুসের রিসেন্টলি মেসিকে জার্সি স্পন্সর করার মত।তিনাকে নবেল দেওয়া হয়েছিল তাঁর গরীবের জীবন পরিবর্তনের আইডোলজির উপর, যা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের এক বিশাল পরিবর্তন আনবে বলে গোটা বিশ্বের ধারণা ছিলো। জানিনা তার কতটুকু সত্যি হয়েছে। তবে অবাক হয়েছি দেখে যে তিনি বিশ্বের সেরা ফুটবল খেলোয়াড়দের স্পন্সর করছেন। এদিকে আমরা বারবার লিখে আসছি ২০৩০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে লাল সবুজের পতাকা দেখতে চাই। তাই চেষ্টা করছি বাংলাদেশে একটি ফুটবল একাডেমী করার অথচ তিনি তাঁর বিশ্ব ভ্রমনে লাখো লাখো টাকা ঢালছেন মেসির গাঁয়ের জার্সিতে যা বলা যেতে পারে সাগরের মধ্যে কিছু পানির ফোটা ঢালার মত। ড. ইউনুস যদি তাঁর এই অর্থ বাংলার ফুটবলের উন্নয়নে ব্যয় করতেন হয়ত হতে পারত ২০৩০ সালের “ড্রিম কাম ট্রু”। জানিনা কেনো ড. ইউনুস বাংলাদেশের জন্য এমনটি সুযোগ করে দিতে সাহায্য করছেন না? যানি তাঁর এই কর্ম তাঁর বিজনেসের জন্য দরকারি এবং এখানে সোসাল আসপেক্টারও গুরুত্ব রয়েছে। অভাগা বাংলাদেশ কিন্তু তাঁকে একদিন নবেল পাবার সুযোগ করে দিয়েছিল তাঁর চিন্তার সমন্বয়কে। মেসিকে স্পন্সর করাকে কিন্তু জানামতে কেও ভালোচোখে দেখে নি পাশ্চাত্যে। কেও কেও বলেছে আমাকে “তুমি বাংলাদেশে ফুটবল একাডেমী করবে বলে চেষ্টা করছ অথচ তোমাদের ড. ইউনুস স্পেনের বার্সেলোনাতে মেসিকে জার্সি স্পন্সর করছে। তাঁর নিজের দেশেই তো সাহায্যের দরকার”? কেনো যেন মনে হচ্ছে একই ভুল করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ তার স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে। এত অর্থের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাশুণ্যে ঘুরছে অথচ হচ্ছে কি তার ব্যবহার পুরোপুরি? বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বর্তমান সুযোগ সর্বাধিক প্রয়োগ করা আবশ্যক।ডিজিটালকে সঠিক ভাবে কাজে লাগিয়ে ইনফরমেশন এবং কমিউনিকেশনকে দ্রুত বিশ্বমানের মত করা, কাগজের টাকামুক্ত বাংলাদেশ করা সঙ্গে দূর্নীতি মুক্ত সমাজ করা এবং অল্পবিদ্যা ভয়ংকারীদের সঠিক ভাবে সুশিক্ষা দেওয়া হোক ডিজিটালের সঠিক ব্যবহার দেশ ও জাতির স্বার্থে।

রহমান মৃধা, দূরপরবাস সুইডেন থেকে