মহাজোটের শরিকদের অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে আগামী দু’দিনের মধ্যে। অর্থাৎ আগামীকাল রোববার ও পরশু সোমবারের মধ্যে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ দলের আসনসহ শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত করছেন। বিভিন্ন জরিপের ভিত্তিতে জোট-মহাজোটের উইনেবল (বিজয়ী) প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে দেখা করে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে ইতোমধ্যে কথা বলছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। তারা বারবার চাপ সৃষ্টি করছেন আসন ভাগাভাগির জন্য। কারণ প্রার্থী চূড়ান্ত না হলে মানসিক চাপ কমছে না। ভোট করার জন্য মাঠে নামার প্রস্তুতিরও প্রয়োজন।বিশেষ করে ১৪ দলের শরিকরা আরও আগে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে বলেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আসন ভাগাভাগি না হওয়ায় তাদের মানসিক চাপ কমছে না। ফলে মাঠেও নামতে পারছেন না তারা। এদিকে, জোটগতভাবে নির্বাচনে আসনের দাবি নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।শনিবার সকালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান জাতীয় পার্টির মহাসচিব; সেখানে কাদেরের সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় হাওলাদার সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, আসনের দাবিতে কম গুরুত্ব দিয়েই আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে চায় জাতীয় পার্টি।

বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচন এইচ এম এরশাদের দল জাতীয় পার্টি সমঝোতার ভিত্তিতে আলাদাভাবে অংশ নিলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধেই অংশি নিয়েছিল।২০০৮ সালে ২৭টি আসন জয়ী জাতীয় পার্টি এখন সংসদে আসন ৩৪টি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে অন্তত ৪০টি আসন আওয়ামী লীগের কাছে জাতীয় পার্টি পেতে চায় বলে দলটির নেতাদের কথায় আভাস মিলছে।

হাওলাদার বলেন, যেসব আসন আমরা চাই, সেগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রকৃতপক্ষে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নির্ভুল পথে চলতে হবে, এখানে আবেগের সুযোগ নেই।কতটি আসনে রফা হয়েছে- জানতে চাইতে তিনি বলেন, আমরা পেয়েছি, আরও পার। আমরা আশাবাদী, চূড়ান্ত হওয়ার সময় আরও ভালো কিছু পাব। এই আশা নিয়ে আমরা চলে যাচ্ছি।আলোচনায় হাওলাদারের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় পার্টি থেকে মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ,প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা ও মুজিবুল হক চুন্নু ও কাজী ফিরোজ রশীদ।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় বলেন, আমরা ইন্টার্নাল আলোচনা করছি, ১৪ দল ও জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য শরিক দলের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। এখন আসন ভাগাভাগির বিষয়টি আলাপ-আলোচনার পর্যায়ে আছে। কাল-পরশুর মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।

জাতীয় পার্টিকে কয়টি আসন দেওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তা এখনও পরিষ্কার নয়।জাতীয় পার্টি ছাড়াও আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোট শরিক দলগুলো রয়েছে; এছাড়া এ কিউ এম বি চৌধুরী নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করবে। শরিকদেরকে কতটি আসন দেওয়া হবে- জানতে চাইলে কাদের আগের মতোই বলেন, ৬৫-৭০র বেশি আসন দেওয়া হচ্ছে না।৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৮ নভেম্বর; কার্যত তার আগেই জোট-মহাজোটগুলোর আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে হবে।গত বৃহস্পতিবার রাতে ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজ কল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা গণভবনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার জন্য। গত মঙ্গলবার বিকল্পধারার সভাপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আবদুল মান্নান গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা আসন ভাগাভাগির কাজটি সেরে ফেলতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা ও সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে দেখছেন। তিনি জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। জোটের নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাদের মতামত জানিয়ে আসছেন।এ বিষয়ে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আসন ভাগাভাগির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখছেন। শরিকরাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের চাওয়া-পাওয়ার কথা বলে এসেছেন। দু-একদিনের মধ্যেই আসন ভাগাভাগির বিষয়টি শেষ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমাদের চাওয়া-পাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আগামীকাল রোববারের মধ্যে সব চূড়ান্ত করা হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। আমরা অপেক্ষায় আছি। আশা করি, আমরা যে তালিকা দিয়েছি সে তালিকা অনুযায়ী আসন পাব।জাসদ (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বলেন, আমরাও অপেক্ষায় আছি। ইতোপূর্বে আমাদের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেগুলো দেখছেন। জরিপ অনুযায়ী উইনেবল প্রার্থীকে তিনি মনোনয়ন দেবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের শরিকদের জন্য ৬৫ থেকে ৭০টি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। দলীয় মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের একাধিক বৈঠকে এ বিষয় স্থির করেছে দলটি। জোট শরিকদের প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকায় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে দেরি হচ্ছে।সূত্র জানায়, শরিক দলগুলোর বাড়তি চাহিদার ব্যাপারেও ভেবে দেখা হচ্ছে। বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য রয়েছেন ৩৫ জন। নির্বাচনে ৩৫ আসনের বাইরে অতিরিক্ত সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে জাতীয় পার্টিকে। পরিবর্তন আসতে পারে জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্যদের এলাকার ক্ষেত্রেও। যদিও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ৭৬টি আসন দাবি করেছে বলে জানা গেছে। ঢাকা-১৭, ফেনী-৩, গাইবান্ধা-৩ ও লালমনিরহাট-৩ এই আসনগুলোতে অতিরিক্ত হিসেবে জাতীয় পার্টিকে দেয়া হতে পারে।অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে। যদিও যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৩৮টি আসনের তালিকা দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের হিসাব অনুযায়ী, মুন্সীগঞ্জ-১ ও ৩, নোয়াখালী-৪ অথবা লক্ষীপুর-৪, সিলেট-৬ এ সকল আসনগুলোতে নিয়ে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে হতে পারে মহাজোটের হিসাব-নিকাশ।