গত দুই যুগে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের শাসনামলকে নির্বাচনের আগে নির্মোহভাবে ভোটারদের সামনে তুলে ধরতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের পাঁচ বছরের শাসনামলকে তিনি চিহ্নিত করেছেন জঙ্গিবাদের উত্থান ও খুনের’ আমল হিসেবে; অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের গত ১০ বছরের শাসনামলকে তিনি চিহ্নিত করেছেন ব্যাংক লুটের’ আমল হিসেবে।মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে এক নাগরিক সংলাপে বক্তব্য রাখেন বিএনপি আমলে ডেপুটি গভর্নর এবং আওয়ামী লীগ আমলে কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালনকারী ইব্রাহিম খালেদ।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে এখন প্রার্থী মনোনয়নের কাজ চলছে দুই প্রধান রাজনৈতিক শিবির আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। এরপর দুই জোটই নামবে প্রচারে।সংলাপে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, নির্বাচনের আগে দুই দল দুই ধরনের কথা বলে। ফলে ভোটাররা বিভ্রান্ত হয়।আওয়ামী লীগ বলে, তাকে ভোট দিতে হবে এই জন্য যাতে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। আবার বিএনপি বলে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য তাকে ভোট দিতে হবে।দুটি দল দুই ধরনের কথা বলে, যার ফলে আমরা নিজেরাও অনেক সময় কনফিওজড হয়ে যাই। আশা করি, আপনারা (সাংবাদিক) জনগণের মেয়র হিসেবে কাজ করবেন।

ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দলের আচরণে ভিন্নতা রয়েছে।পদ্মার জল পরিষ্কার, কিন্তু মেঘনার জল ঘোলা। এই দুই জল এক হতে পারে না। তেমনিভাবে বাঙালি ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীদের আচরণ মিশে না।তাই ভোটের আগে দুই সরকারের দুই চিত্র জনগণের সামনে নিরপেক্ষভাবে ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে তুলে ধরার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।বিএনপি আমলের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আগে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় ছিল। ওই সরকারের আমলে দেশে গ্রেনেড আর বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে। ২১ অগাস্টের মতো ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। আবার বাংলা ভাইয়ের হাত ধরে জঙ্গি উত্থানের মতো ঘটনা ঘটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীলতায় ফেলে দিয়েছিল।২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় ছিলেন। আমরা তো দেখেছি, তখন করেছেন বোমাবাজি, গ্রেনেডবাজি এগুলো কি গণতন্ত্র? এটাকে আমরা বলি সন্ত্রাসের গণতন্ত্র।জামায়াতে ইসলামের পপ্রসঙ্গ তুলে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, “বিএনপি-জামায়াত একেবারে মানিক জোড়। তারা একে অন্যকে ছাড়তে পারে না। কারণ দুই দলেরই মুরব্বি এক। তাদের অর্থ এক জায়গা থেকে আসে।বিএনপি আমলে ৬৪ জেলায় বোমা হামলা হয়েছে। অবশ্যই সেখানে সরকারের মদদ ছিল। এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় বোমা হামলা হয়েছে। এরপর শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়াকে হত্যার চেষ্টা করেনি।আওয়ামী লীগের গত ১০ বছরের শাসনামলে উন্নয়ন হলেও সুশাসনের অভাব দেখেছেন ইব্রাহিম খালেদ।আবার ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালে দুই মেয়াদে বর্তমান সরকার আমলে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক লুট হয়েছে। ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম সুশাসনের অভাবের কারণেই হয়েছে।

এজন্য আবার আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী দল জাতীয় পার্টিকে দায়ী করে এই ব্যাংকার বলেন, ব্যাংক লুট আওয়ামী লীগ করেনি, করেছে জাতীয় পার্টি। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর কথা তুলে ধরে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, নানা অভিযোগের পরও তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটিতে রেখেছিল সরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে সরাতে পারে না। পারে শুধু বেসরকারি ব্যাংকের কাউকে সরাতে। কিন্তু চিঠি দিয়ে অনুরোধ করতে পারে।অর্থমন্ত্রীর কাছে গভর্নরের চিঠি পাঠানোর প্রসঙ্গ তুলে সাবেক এই ডেপুটি গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাচ্চুকে সরাতে চিঠি দেওয়া হলেও তা করেনি সরকার। আইনে লেখা আছে, সরকার এ ধরনের সুপারিশকে গুরুত্ব দেবে। কিন্তু গুরুত্ব দেওয়া হয়নি এবং সেই চিঠি অনুযায়ী কাজ হয় নি। সেই চেয়ারম্যান তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের দিন চলে গেলেন। সরানো আর চলে যাওয়া এক কথা নয়।

এই ঘটনাটিকে ‘অপশাসন’র উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এই টাকা তো আওয়ামী লীগ সরকারের টাকা না, ব্যাংকের মালিকের টাকাও না। এটা জনগণের জমানো টাকা। আপনার আমলে এটা কেন হতে দিলেন? এটা তার দোষ।আওয়ামী লীগ আমলের এই সমালোচনার পাশাপাশি তিনি বলেন, আবার এটাও বলতে হবে যে তিনি গ্রামে গ্রামে উন্নয়ন পৌঁছে দিয়েছেন। জনগণ সবকিছু মিলিয়ে বিচার করবে। আমরা আশা করি, সরকার ভবিষ্যতে মন্দ কাজগুলো পরিহার করে ভালো কাজগুলোকে এগিয়ে নেবে, বলেন তিনি।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এই সংলাপ আয়োজন করে জাগো বাংলা ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কবি ও কলামনিস্ট নাসির আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন।আলোচনায় বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান,জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশীদ, নাট্যবক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ।