গাজীপুরে আইনজীবী সমিতির হলরুমে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আত্মঘাতি বোমা হামলার ১৩তম বার্ষিকী ছিল বৃহষ্পতিবার। দিনব্যাপী নানা কর্মসুচির মধ্য দিয়ে এ দিবসটি পালিত হয়েছে।

২০০৫ সালের ২৯ নবেম্বর গাজীপুর আদালত এলাকায় আইনজীবী সমিতির দুই নম্বর হল রুমে জেএমবি আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। হামলায় ছয় আইনজীবী, চার বিচারপ্রার্থী ও হামলাকারী নিহত হন। আত্মঘাতী এ বোমা হামলায় আরো অর্ধশতাধিক আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী আহত হন।

দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে বৃহষ্পতিবার সকালে গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ভবন প্রাঙ্গনে বোমা হামলায় শহীদদের স্মরণে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভ ‘‘স্মৃতি শিখা অনির্বাণ’’ এ আইনজীবী সমিতি, গাজীপুর জজশীপ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ও ম্যাজিষ্ট্রেসী এবং পুলিশের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় কালো পতাকা উত্তোলন ও বারের সব আইনজীবীরা কালোব্যাজ ধারণ করেন। পরে আইনজীবীরা মৌন মিছিলসহ শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।

দুপুরে গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ভবন প্রঙ্গনে শহীদ আইনজীবীদের স্মরণে ও আহত আইনজীবীদের সুস্থ্যতা কামনায় শোকসভা, মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান বক্তব্য রাখেন গাজীপুরের জেলা ও দায়রা জজ এ কে এম এনামুল হক, গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এমএলবি মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহম্মদ হুমায়ূন কবীর, গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার সামসুন্নাহার, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আশরাফুল আলম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (ক্রাইম) সফিকুর রহমান, বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ওয়াজউদ্দিন মিয়া, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান কাজল, অ্যাডভোকেট ফজলুল হক প্রমূখ। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক।

প্রসঙ্গতঃ ২০০৫ সালের ২৯ নবেম্বর গাজীপুর আদালত এলাকায় আইনজীবী সমিতির দুই নম্বর হল রুমে জেএমবির এক সদস্য আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। ওই হামলায় ছয় আইনজীবী, চার বিচারপ্রার্থী ও হামলাকারী নিহত হন। আত্মঘাতী এ বোমা হামলায় আরো অর্ধশতাধিক আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী আহত হন। ওই ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলার মধ্যে ঘটনার ৮বছর পর একটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে ২০১৩ সালে। এ মামলায় অভিযুক্ত ১০ জেএমবি সদস্যের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন দ্রুত বিচার আদালত-৪। বাকি দুটি ঢাকায় দ্রুত বিচার (বিশেষ) আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

আত্মঘাতি বোমা হামলায় ঘটনাস্থলে নিহতরা হলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল আজিম, অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা ও অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক অভি। এসময় মারা যান জেএমবি সদস্য শরিয়ত উল¬াহ ওরফে আসাদুল ইসলাম ছাড়াও বিচার প্রার্থী আব্দুর রউফ, বশির মেম্বার, শামসুল হক ও মর্জিনা বেগম। অন্যরা পরে মারা যান। এ ঘটনার দুইদিন পর ১ ডিসেম্বর দুপুরে আবারও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে জেএমবির এক আত্মঘাতী সদস্য ফ্ল্যাক্স বোমা হামলা চালায়। এতে কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম সরকার নিহত এবং সাংবাদিকসহ অন্ততঃ ২৫ জন আহত হয়।