আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর মহাজোট সরকারের দুই মেয়াদেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অসম্পূর্ণ বিষয়গুলোর বাস্তবায়নে কোনও কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২১ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।

সন্তু লারমা বলেন, উদ্যোগ গ্রহণ না করে দেশে বিদেশে অপপ্রচার চালানো হয় যে পার্বত্য চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে, চুক্তির ৮০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে, সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে সম্পূর্ণভাবে আন্তরিক, এ সরকারের আমলেই চুক্তির অবশিষ্টাংশ সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হবে ইত্যাদি। আবার ক্ষমতাসীনরা অনেক শঠতাপূর্ণ যুক্তি দিয়ে থাকেন যে-পৃথিবীর কোনও চুক্তিই ১০০ ভাগ বাস্তবায়িত হয়নি, পার্বত্য চুক্তির মতো বিশ্বের কোনও চুক্তিই এতো দ্রুত বাস্তবায়িত হয়নি ইত্যাদি। প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতা হচ্ছে ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে এবং মৌলিক বিষয়সমূহের দুই তৃতীয়াংশ ধারা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। চুক্তি বাস্তবায়নের বাস্তব চিত্রের বিবরণ ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও সশস্ত্র কার্যক্রম হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্যাপক অপপ্রচার ও তথ্য সন্ত্রাস চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভাড়াটে ভুঁইফোড় সাংবাদিক দিয়ে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক এবং অনলাইন গণমাধ্যমের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণসহ অসহায় পার্বত্যবাসী প্রশাসন ও সরকারি বাহিনীর অপপ্রচার ও তথ্য সন্ত্রাসে অবরুদ্ধ হয়ে এক শ্বাসরুদ্ধকর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।দমন-নিপীড়নের পরিস্থিতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কখনোই অনুকূল নয়’ বলে দাবি করেন সন্তু লারমা। পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি চরম সংকটজনক হয়ে উঠছে দাবি করে সন্ত লারমা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জুম্ম নারীদের ওপর সহিংসতার মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বান্দরবান জেলার আলীকদম, থানচি, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক জুম্ম গ্রামবাসী নিরাপত্তার অভাবে মিয়ানমারে দেশান্তরিত হতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন জুম্মরা জমি হারাচ্ছে, প্রতারিত হচ্ছে, অপমানিত, নিপীড়িত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার যতই দাবি করুক না তার শাসনব্যবস্থা গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, উন্নয়নমুখী ও প্রগতিশীল, কিন্তু বাস্তবে পার্বত্য অঞ্চলের দিকে তাকালে তা সত্য নয় বলে জানা যায়। সরকার তথা শাসকগোষ্ঠী চায় পার্বত্য অঞ্চলের ১৪টি আদিবাসী জাতির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাক।