একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঢাকায় তলব করা হয়েছে। এ ব্যাপারে দল থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও তেমন কোন মাথাব্যথা নেই প্রার্থীদের। তথ্য মতে, প্রায় ৭৯ জন আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। হেভিওয়েট যেসব নেতা মনোনয়ন পাননি তাদেরকে আগেই প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ডেকে বুঝিয়েছেন। তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক মোহাম্মদপুরে সাদেক খানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। আব্দুর রহমান, বাহাউদ্দিন নাছিম এবং আ খ ম মোজাম্মেল হক ঢাকায় কেন্দ্রীয় নির্বাচনী প্রচারণা টিমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এই চারজনের জনপ্রিয়তা থাকা সত্বেও তারা আওয়ামী লীগের অসুবিধার কারণ হননি।

জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের ৭৯ জন যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার লক্ষে প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ চাচ্ছে ৯ ডিসেম্বরের আগেই এ সমস্ত বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে ঢাকায় নিয়ে আসা হবে। ঢাকায় ডেকে স্বয়ং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী নিজেই তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। কথা বলে তাদেরকে নির্বাচন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশনা দিবেন।

একাধিক সূত্র বলছে যে, আওয়ামী লীগের যে ৭৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে, এদের মধ্যে কয়েকজন রয়েছেন যারা নির্বাচনে অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তি। তারা যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে ওই আসনগুলো আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতিকারক হবে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে যে, নরসিংদী ৩ আসনে সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। যিনি গতবারও স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এবারও তিনি মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে দাড়িয়েছেন।

নরসিংদী- ২ আসনের আলতামাস কবির, ফেনী -৩ আসনে আবুল বাশার, মেহেরপুর- ১ আসনে প্রফেসর আব্দুল মান্নান, যশোর ২- আসনের অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম, দিনাজপুর- ২ আসনে ডা. মানবেন্দ্র রায়সহ ফেনী ১, নারায়নগঞ্জ ৩, নারায়নগঞ্জ ৪ , শরীয়তপুর ২, মুন্সিগঞ্জ ৩, টাঙ্গাইল ৬ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের জন্য বড় মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ফেনী ৩ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন তিনজন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ আগামী ২ ডিসেম্বর মনোনয়পত্র বাছাইয়ের পর দেখতে চান কতজন বিদ্রোহী প্রার্থী টিকে থাকলো। যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাবে, তাদের বাদ দিয়ে যাদের মনোনয়ন টিকবে, তাদেরকে ২ থেকে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকায় তলব করা হবে। তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মূলত ৩ টি বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। তাদেরকে বলা হবে। অবিলম্বে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগ যাদের মনোনয়ন দিয়েছে তাদের পক্ষে যদি কাজ করে তাহলে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে। ভবিষ্যতে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতায় সম্পৃক্ত করা হবে।

দ্বিতীয়ত তাদেরকে বলা হবে, তারা যদি প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করে। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের পাশাপাশি যদি নৌকা প্রতীকে প্রার্থীদের পক্ষে কাজ না করে। তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে তারা যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী দৌঁড়ে থাকে। তাহলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে তারা আক্রমনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।

এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমাণ্ড বসবে। ইতিমধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সমস্ত বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদেরকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের বাস্তবতা বলে, দলের সভাপতি হস্তক্ষেপ করা ছাড়া এ ধরনের মনোনয়ন বঞ্চিতদের বিদ্রোহ ও তাদের অসেন্তোষ দূর করা সম্ভব নয়।