তুরাগ থানা এলাকার চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডার মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ। এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে দুই হত্যাকারীকে। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র-ধারালো বটি ও রড।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- ১। মোঃ মনির হোসেন ও ২। মোঃ ফরিদ। গত ২০ অক্টোবর’১৮ রাতে তুরাগ থানাধীন উত্তরার ১৬ নং সেক্টরের ২ নং প¬টে কাশবনে ঘেরা স্থানে ২টি অজ্ঞাতনামা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে তুরাগ থানা পুলিশ। দুটি লাশেরই চেহারা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় তাদের সনাক্তকরনে পুলিশ জটিলতার মধ্যে পড়ে । বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে লাশ উদ্ধারের খবর প্রকাশিত হবার পরদিন ২১ অক্টোবর’১৮ লাশ দুটি সনাক্ত করে তাদের স্বজনেরা। জানা যায় মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় যথাক্রমে ১। কামাল হোসেন(২৪), পিতাঃ শেখ জলিল, থানাঃ সদরপুর, জেলা ফরিদপুর এবং ২। ইমন শেখ(২৫), পিতাঃ মোঃ আজম শেখ, থানাঃ নগরকান্দা, জেলা ফরিদপুর। এ ঘটনায় ভিকটিম কামাল হোসেনের পিতা শেখ জলিল বাদী হয়ে তুরাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তুরাগ থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্তে নামে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ। কোনক্রমেই মামলাটির সুরাহা না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে তদন্তভার অর্পণ করা হয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিমে।

তদন্তভার গ্রহণ করার পর বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজধানীর আদাবরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত ৩০ নভেম্বর ২০১৮ বিকাল সোয়া ৪ টায় আসামী ১। মনির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। একইদিন রাত সাড়ে ১১ টায় শনির আখড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার হয় অপর আসামী ২। মোঃ ফরিদ। মামলার তদন্ত এবং আসামীদ্বয়ের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে এ নির্মম হত্যাকান্ডের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

যেকারণে হত্যা করা হয়ঃ
মামলার তদন্ত এবং আসামীদ্বয়ের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, ভিকটিম কামাল হোসেন ও ইমন শেখসহ আসামী মোঃ মনির হোসেন এবং মোঃ ফরিদ একই আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। তারা তাদের ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্য রেজাউল, আল-আমিনসহ রাজধানীর তুরাগ থানাধীন বেড়িবাঁধ, উত্তরা সেক্টর এলাকা এবং ফরিদপুরসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলার কখনো পাকা রাস্তা বা কখনো কাঁচা রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ি থামিয়ে ডাকাতি করত। দিনের বেলা তারা কখনো রংমিস্ত্রি, কখনো গাড়ির ড্রাইভার-হেল্পার হিসেবে কাজ করত। গভীর রাতে প্রথমে তারা রোড ডিভাইডারের খন্ড, বড় পাথর ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে রাস্তায় চলাচলকারী প্রাইভেটকার, সিএনজি ইত্যাদির পথরোধ করত। তারপর ধারালো দা, বটি, লোহার রড ইত্যাদি বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে যাত্রীদের ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে টাকা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার লুটে নিত। কাজ শেষে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিত লুন্ঠিত মালামাল। এই ভাগাভাগি থেকেই সৃষ্টি হয় কোন্দল। বিভিন্ন সময় ভিকটিম কামাল ও ইমন লুন্ঠিত মালামালের অধিকাংশ নিয়ে নেয়ায় বাকিদের মধ্যে এ নিয়ে সৃষ্টি হয় অসন্তোষ। সর্বশেষ ফরিদপুরে একটি ডাকাতির মালামাল ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দ¦ন্দ্ব চরমে পৌছায়। তখনই প্রতিশোধ নিতে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ ফরিদ এবং মোঃ মনির হোসেন ভিকটিম কামাল ও ইমনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

যেভাবে হত্যা করা হয়ঃ
গত ১৪ অক্টোবর’১৮ সন্ধ্যায় যথারীতি ভিকটিম কামাল হোসেন ও ইমন শেখসহ আসামী মোঃ মনির হোসেন, মোঃ ফরিদ এবং রেজাউল নামে ডাকাতদলের অন্য এক সদস্যসহ ডাকাতির উদ্দেশ্যে একে একে মিলিত হতে থাকে তুরাগ থানাধীন উত্তরার ১৬ নং সেক্টরে। রাত ৯ টা’র দিকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে রওনা হবার পর ১৬ নং সেক্টরের ২ নং প¬টের কাশবনের ভেতর দিয়ে যাবার সময় এক পর্যায়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মোঃ মনির হোসেন এবং মোঃ ফরিদ সঙ্গে থাকা ধারালো বটি ও লোহার রড দিয়ে হিংস্রভাবে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে ভিকটিম কামাল হোসেন ও ইমন শেখকে। এসময় ভয় পেয়ে সেখান থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে যায় রেজাউল। প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট উপুর্যপরি আঘাত করার পর রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত ভিকটিম দুজনকেই মৃত ধারণা করে লাশগুলো ফেলে রেখে সেখান থেকে পালিয়ে যায় আসামীদ্বয়। পালানোর সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো বটি ও রড রাস্তার পাশে ঝোপের ভিতর ফেলে দেয় তারা।

যেভাবে পালিয়ে থাকে হত্যাকারীরাঃ
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, হত্যাকান্ডের পরপরই গা ঢাকা দেয় তারা। গ্রেফতারকৃত আসামী মনির গাবতলী এলাকায় নিজের আবাস ছেড়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভাসমান অবস্থায় ঘুরে বেড়াতে থাকে। অন্যদিকে এ হত্যাকান্ডের পর ফরিদ রাজধানী ছেড়ে কুমিল্ল¬ার বিভিন্ন এলাকা, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবায় পালিয়ে থেকে ডাকাত দলের সদস্য জড়ো করে পুনরায় ডাকাতির পরিকল্পনা করতে থাকে। গোয়েন্দা পুলিশ গোপন সূত্র ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত ফরিদের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে।

উপ-পুলিশ কমিশনার, মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকা