বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের অন্য নেতাদের মনোনয়নপত্র বাতিল সরকারের দানবীয় আচরণ এবং নিখুঁত মাস্টারপ্ল্যানের অংশ’ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।রোববার দুপুর ১২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।মনোনয়নপত্র বাতিলের মধ্য দিয়ে সরকারের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, দূরভিসন্ধিমূলক ও সরকারের মাস্টারপ্ল্যানেরই অংশ উল্লেখ করে রিজভী বলেন, নির্বাচন বানচালের জন্য সরকার দেশব্যাপী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতার মৌতাতে বুঁদ হয়ে থাকার জন্যই অবৈধ শাসকগোষ্ঠী আসন্ন নির্বাচন নিয়ে মাস্টারপ্ল্যানে ব্যস্ত আছে।

তফসিল ঘোষণার শুরু থেকেই নির্বাচনের পরিবেশ যেন আরো অবনতিশীল হয়েছে। নৌকার পক্ষে হালে পানি না পাওয়ায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও নেতাকর্মীদের শুধু মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার করেই সরকারের সাধ মিটছে না। এখন তাদের ভিটেমাটিতে ঘুঘু চরিয়ে দিতে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে’, বলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা।রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রার্থীসহ বেছে বেছে সারা দেশে বিএনপির সক্রিয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেপ্তার ও গুম করা হচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।

নির্বাচন কমিশনকে হুকুমবরদার অভিহিত করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, বিরোধী ও দলশূন্য নির্বাচনী মাঠ তৈরি করতেই এসব ঘৃণ্য অপকর্ম সাধন করা হচ্ছে। যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ছোঁ মেরে তুলে নিচ্ছে, গুম করছে, গ্রেপ্তারের পর অস্বীকার করছে, রিমান্ডে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে এবং জামিনে মুক্তিলাভের পরও জেলগেট থেকে আবারও অ্যারেস্ট করা হচ্ছে তাতে সারা দেশে এক রক্ত-শীতল করা আতঙ্কজনক পরিবেশ বিরাজমান হয়েছে।

জনগণকে ভোট থেকে দূরে রাখার জন্য তারা পরিকল্পিতভাবে ভোটের পরিবেশ বিনষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সরকারি দলের অনাচারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ঘটনা থেকেই মনে হয় তারা ভোটারদের ভীতিগ্রস্ত করতে চায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনের সময় এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কখনো দেখা যায়নি। সুপরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবেই এসব করা হচ্ছে নৌকাকে জালিয়াতির মাধ্যমে বিজয়ী করার জন্য’, বলেন রিজভী।

ইসির সমালোচনা করে রিজভী আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন হয় অন্ধ, না হয় কানা। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কতিপয় কমিশনার সরকারের পক্ষে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন, আইন-আদালত, বিচারিক প্রক্রিয়া সবকিছুর উপরই সরকার যেন সিন্দাবাদের জীনের মতো সওয়ার হয়ে আছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে মনোনয়ন পত্রের দুই’পাশ থেকে ধরে আছেন পুলিশের দুজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। অর্থাৎ পুলিশ কর্মকর্তারা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে। অথচ এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন উদাস কবির মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নিল না।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।