আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে গত পাঁচ বছরের বিভিন্ন সময়ে গুম হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের ৪০টি পরিবার এর বিচার চেয়েছেন। তাদের দাবি, এ নির্বাচনে বিজয়ী দল রাষ্ট্রীয়ভাবে গুম-খুন ও ক্রসফায়ারের মতো জঘন্য কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন না-তার অঙ্গীকার ইশতেহারে থাকতে হবে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসকাবে সংবাদ সম্মেলন করে ‘মায়ের ডাক’ নামক গুম হওয়া পরিবারের সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় গুম-খুন-বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৪০টি পরিবার এই দাবি জানান।

এ সময় গুম-খুন হওয়া পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। চোখের পানি ফেলেন উপস্থিত মানবাধিকারকর্মীরাও, যাদের অধিকাংশকেই ২০১৩ সাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুর রহমান সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী বলেন, ‘র্যা ব সদস্যরা ভাইকে তুলে নেওয়ার পাঁচটি বছর শেষ হয়েছে। সামনে সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে বর্তমান সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে। আমাদের মায়ের ডাকের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি একটি দাবি, দলীয় ইশতেহারে গুম হওয়ার বিষয়ে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের স্পষ্ট বক্তব্য থাকতে হবে। এই দাবির পাশাপাশি আগামীর সরকারকে একটি গুম কমিশন গঠন করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর মান্না বলেন, ‘রাক্ষস যেমন মাংস খায়, এই সরকার তেমন মানুষ খায়। এরা ক্ষমতায় থাকলে কোনো গুম-খুনের জবাব পাবেন না। এই বিচার পেতে হতে এদেরকে এই নির্বাচনের মাধ্যমে উৎখাত করতে হবে। আর যারা ক্ষমতায় আসবে তাদের কথা দিতে হবে, তারা গুম-খুনের বিচার করবে।’

মান্না আরও বলেন, ‘র‌্যাব-পুলিশ এখন যারা নির্বাচনী প্রার্থী তাদের গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার করছে। গুম-খুন হওয়া পরিবারকে এদের বিরুদ্ধে ভোটের মাধ্যমে জবাব দিতে হবে।’ মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘সরকার বদল হলে পুলিশ-র্যা বকে গুম-খুনের জবাব দিতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকেই এর জবাব দিতে হবে। এখন সময় এসেছে নির্বাচনের মাধ্যমে সবাইকে এই জবাব দিতে হবে। আমাদের ভয় পাওয়ার আর কিছু নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপত আসিফ নজরুল বলেন, ‘গুম হচ্ছে খুনের চেয়েও জঘন্য। আন্তর্জাতিক আইনে বলা আছে, গুম বা খুন পরিকল্পিত হলে এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। যারা এর বিচার পাচ্ছেন না, তারা আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চাইতে পারেন।’

মানবাধিকারকর্মী নাসির উদ্দিন এলান বলেন, ‘গুম-খুন নিয়ে কথা বলায় মানবাধিকারকর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের আগে গুম-খুন বেড়ে গেছে। এই নির্বাচনের আগেও গুম-খুন করা হচ্ছে। সবাইকে এ বিষয়ে কথা বলতে হবে।’

পাঁচ বছর আগে গুম হওয়া সাজেদুর রহমান সুমনের মা হাজেরা বেগমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম লালা প্রমুখ।