যশোর-৫ (মনিরামপুর উপজেলা) আসনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (একাংশ) সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে মেনে নিতে পারছেন না বিএনপি। ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে থানা বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মুফতি ওয়াক্কাসের প্রার্থীতা মেনে নিতে না পারায় থানা বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের ৫ শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। রোববার সকালে জোটের প্রার্থী মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের ছেলের গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

এসময় উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান নিস্তার ফারুককে জিজ্ঞাসবাদের জন্য থানায় আনা হলেও পরে মুচলেকায় ছেড়ে দেয়া হয় বলে পুলিশ জানায়। গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়টি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের বড় ছেলে আবদুর রশিদ নিশ্চিত করেছেন। শনিবার সন্ধ্যার পর মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের চূড়ান্ত মনোনয়নের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। দলটির নেতা-কর্মীদের অনেকেই ওই রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আর বিএনপি করবেন না’ এমন পোস্ট দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে প্রার্থী করার প্রতিবাদে রোববার দুপুরের পর থেকে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের উপজেলা, পৌর এবং ইউনিয়নসহ ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে।

দলটির বিভিন্ন স্তরের প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী উপজেলা বিএনপির সভাপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে পৌর বিএনপির সভাপতি খাইরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএম মশিউর রহমান নিজেও পদত্যাগ করেছেন উল্লেখ করে বলেন, এ সংসদীয় আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রভাব না থাকলেও বিগত নবম এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪ দলীয় জোট থেকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে মনোনয়ন দেয়া হয়। তারপরও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত একাট্টা হয়ে তাতে বিজয়ী করে। তবে স্থানীয় জোটের সাথে তার সম্পর্ক অত্যন্ত শীতল হওয়ায় ২০০৮ সালে তিনি ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হলেও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস মনিরামপুরে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে তেমন কোনো সম্পর্ক রাখেননি। এ ছাড়াও বিগত ১০ বছরে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের কোনো খোঁজখবর নেননি মুফতি ওয়াক্কাস।  মুফতি ওয়াক্কাসের নামে থানায় নাশকতার চারটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় তিনি বর্তমান আত্মগোপনে রয়েছেন। এ অবস্থায় তিনি কীভাবে নির্বাচন করবেন প্রশ্ন রেখে তিনি আরো বলেন, এমন গণবিচ্ছিন্ন নেতার পক্ষে কোনভাবেই নির্বাচন করা সম্ভব না। এ কারনে প্রতিবাদে নেতাকর্মীরা পদত্যাগ করছেন।

পদত্যাগপত্র গ্রহণের সত্যতা নিশ্চিত করে শহীদ ইকবাল হোসেন জানান, গণবিচ্ছিন্ন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ায় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের মধ্যে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু গণপদত্যাগের বিষয়টি অসমর্থিত সূত্রে জানতে পেরেছেন কিন্তু এখনও হাতে পাননি উল্লেখ করে বলেন, যেহেতু সেখানে হামলা-মামলার শিকার বিএনপির জনপ্রিয় একজন প্রার্থী ছিলেন। তাকে পাশ কাটিয়ে আরেকজনকে প্রার্থী করায় এমনটি হতে পারে। তবে, তা প্রশমিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।