কমিশনে অনেকবার নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত)নিয়ে আলোচনায় আসা নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সংরক্ষণ ও পরিপালনের পূর্বশর্ত হলো আইনের শাসন। আইনের শাসন না থাকলে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে আমরা হলুদ গণতন্ত্র বলতে পারি। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে হলুদ গণতন্ত্র চাই না। চাই স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক গণতন্ত্র। আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করে স্বচ্ছ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সোমবার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেদের উদ্দেশে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন বিষয়ে নির্দেশনামূলক বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।মাহবুব তালুকদার বলেন, বিচারকের দৃষ্টি হতে হবে নির্মোহ। তিনি অবশ্যই আইনানুগ মন বা লিগ্যাল মাইন্ডের অধিকারী হবেন। যিনি এ অবস্থান থেকে বিচ্যুত হবেন, তিনি বিচারকের যোগ্যতা হারাবেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলে থাকি, নির্বাচন আইনানুগ করতে হবে। এ কথাটার ব্যাখ্যা প্রয়োজন। আইন যদি নিজস্ব খাতে প্রবাহিত না হয়, তাহলে আইনানুগ কথাটা অর্থহীন হয়ে পড়ে। আইনের মূল কথা হচ্ছে সব নাগরিকের প্রতি সমআচরণ। আইনের চোখে সবাই সমান-এ আপ্ত বাক্যের কোনো একক অভিব্যক্তি নেই। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সবাই সম-অধিকার ভোগ করে কি-না, সেটাই বিবেচ্য। জাতীয় নির্বাচনে সবার প্রতি সব আইন নিরপেক্ষভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কি-না, তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, আপনারা নির্বাচনী ব্যবস্থাপনাকে আইনসিদ্ধ করার বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। নির্বাচনে অনিয়ম বা বিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে আপনারা কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করলে তা নির্বাচনকে ত্রুটিমুক্ত করার বিষয়ে অবদান রাখবে। শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে আপনাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন ভুয়া সাক্ষ্যপ্রমাণে শাস্তি না পায়।

মাহবুব তালুকদার বলেন, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক সার্বজনীন ও পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন করতে চাই। এ জন্য কেবল দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসী এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মনে করি, আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসের এক সোনালী অধ্যায় রচনা করবে। সেই সোনালী অধ্যায়ের রূপদানকারী আপনারা। আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, তা নিশ্চিত করা। জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে আপনারা এক মহান দায়িত্ব নিয়েছেন। নির্বাচনের শুদ্ধতায় আপনাদের অবদান জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে।

তিনি আরও বলেন, একজন ভোটার নির্বিঘ্নে বাড়ি থেকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ইচ্ছানুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দিয়ে যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, এটুকুই তো চাওয়া। রাজনৈতিক বাস্তবতায় এ সামান্য চাওয়া বাস্তবায়িত করতে এক বিশাল কর্মযজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছে। প্রায় ১২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের তিন দিনব্যাপী ব্রিফ অনুষ্ঠানে প্রথম ধাপে আজ ২১৫ জন অংশ নেন। তিন ধাপে মোট ৬৪০ জুডিশয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ব্রিফ করবে কমিশন।
ভোটের আগের দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পরের দুই দিন নির্বাচনের মাঠে নিয়োজিত থাকবেন এ জুডিশয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা। ৩০ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত এ সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।