আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের আগামী দুই দিনের মধ্যে ঘোষণা দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করা না হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) দলের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এ আলটিমেটাম দেন। দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈকি কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে নানক বলেন, আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। এটা দেড় ডজন হবে না, আরও অনেক কম।

যারা এখনও আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আমরা তাদেরকে জানাতে চাই, আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সরে দাঁড়াতে হবে। সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে হবে। আমরা আশা করি এই সময়ের মধ্যে তারা সরে দাঁড়াবে এবং মাঠে দল ও মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তা না হলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমানসহ কয়েকজন সাংগঠনিক সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থীদের যোগাযোগ করে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। গত ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে বেশ কিছু বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। নির্বাচনে দলের যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন তাদেরকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে বলে আওয়ামী লীগ আগেই ঘোষণা দিয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভন ও ক্ষুব্ধ আচরণ করেছেন। সাংবাদিকদের হুমকি-ধমকি দিেেয়ছেন। আওয়ামী লীগ এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

নানক বলেন,রাজনীতিতে ড. কামাল হোসেনকে কখনো জাতির সংকট মুহূর্তে পাওয়া যায়নি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং ১৯৭৫ সালে ড. কামাল হোসেনের ‘রহস্যাবৃত’, ‘বিতর্কিত’ ভূমিকার কথা দেশবাসী জানে। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে তাঁকে কখনো পাওয়া যায়নি। নানক আরও বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন বিভিন্ন সময় দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন, ড. কামাল হোসেনের ষড়যন্ত্র-রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতারই অংশ।

বিএনপি মিথ্যাচার করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করছে অভিযোগ করে নানক বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে দেশবাসী ও ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা চলছে। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে সকাল থেকে সারা দিন বিএনপির নেতারা গণমাধ্যমের সামনে লাগাতার ‘অপপ্রচার’ ও ‘বিভ্রান্তি’ ছড়াচ্ছেন।

বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নানক বলেন,মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে উসকানি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অপপ্রচার ও মিথ্যাচার ছেড়ে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সমালোচনা করে নানক বলেন, রিজভীর অসংলগ্ন কথাবার্তা ও নির্লজ্জ মিথ্যাচার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে যা শুনলে স্বয়ং ইবলিস শয়তানও লজ্জা পেতে পারে। মিথ্যা বলাকে উদ্দেশ্যবিহীন অভ্যাসে পরিণত করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী প্রলাপবচন শুরু করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কীভাবে লজ্জাকর মন্তব্য করেছেন রিজভী। যদিও যাদের অস্থিমজ্জায় মিথ্যাচার থাকে এবং মিথ্যা বলা যাদের উদ্দেশ্যবিহীন অভ্যাসে পরিণত হয়, তাদের পক্ষে সত্যের পথে ফিরে আসা অত্যন্ত দুরূহ। তারপরও আমরা বিএনপি নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানাই, মিথ্যাচারের পথ পরিহার করে সত্য ও সঠিক পথে ফিরে আসুন।সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন প্রমুখ।