একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্র“তি এসেছে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে।বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে দুই মাস আগে গঠিত এই জোট বলছে, ২০১৪ সালে নির্বাচনের নামে প্রহসনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণ হারিয়েছিল।সেই মালিকানা তারা ৩০ ডিসেম্বর ভোটে জিতে আবার সকল জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে চায়, যার মধ্যে পরাজিতরাও থাকবে।

ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে সোমবার ঢাকার হোটেল পূর্বাণীতে ৩৫ দফা প্রতিশ্র“তি রেখে এই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।কামাল হোসেনের প্রারম্ভিক বক্তৃতার পর মান্না ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার পড়ে শোনান।কামাল হোসেন তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে এই প্রহসনটি হয়েছিল, সেটি সংবিধান বর্ণিত জনগণের প্রত্যেকের ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।এই নির্বাচনের মাধমে জনগণ এই রাষ্ট্রের মালিকানা হারিয়েছিল।

গত দশ বছর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে দলটির সাবেক নেতা কামাল বলেন, জনগণ যখন মালিক থাকে না, তখন রাষ্ট্রের মালিক হয়ে পড়ে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী, দেশি বিদেশি নানা গোষ্ঠী। এর মাশুল দিতে হয়েছে এই দেশের মানুষকে। এটা আপনারাও হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছেন।জোটের ইশতেহার থেকে পড়ে শুনিয়ে মান্না বলেন, নির্বাচনে জিতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের কল্যাণে সরকার পরিচালণা করবে। এই পরিচালনার মূলনীতি হবে ঐক্যমত্য, সকলের অন্তর্ভুক্তি এবং যে কোনো রকম প্রতিহিংসা থেকে মুক্ত থাকা।

মান্না বলেন,প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বর্ণিত এই নীতির ভিত্তিতে সরকার পরিচালণায় যাবতীয় পদক্ষেপের ভিত্তি হবে রাষ্ট্রের মালিকগণের মালিকানা সুদৃঢ় করা।
ঐক্যফ্রন্ট প্রতিশ্র“তি দিচ্ছে, রাষ্ট্রের এই মালিকানা কেবল নির্বাচনে জেতা মানুষের হবে না, এই মালিকানা থাকবে পরাজিত দলের নেতা কর্মী সমর্থকদেরও। রাষ্ট্র পরিচালিত হবে নির্বাচনে পরাজিতদের মতামত ও মালিকানা নিশ্চিত করে।ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন করার প্রতিশ্র“তি রয়েছে ঐক্যফ্রন্টের ৩৫ দফার ইশতেহারে। কেউ যাতে দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারে, একদলীয় শাসন; যাতে ফিরে না আসে, সেই ব্যবস্থা ঐক্যফ্রন্ট করবে।তবে বর্তমান কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করা হবে না এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে প্রতিশ্র“তি এসেছে তাদের ইশতেহারে।কামাল হেসেন বলেন, এটা জনগণের ইশতেহার। জনগণের কল্যাণ, জনমতের ভিত্তিতে এটা তৈরি করা হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মতামত গ্রহণের ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা ভোটের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে দেশে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাস করি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এলে সামরিক বাহিনী ও পুলিশ ছাড়া সরকারি চাকরিতে প্রবেশে কোনো বয়সসীমা রাখবে না জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এছাড়া অনগ্রসর ও প্রতিবন্ধী ছাড়া কোনো কোটাও রাখবে না তারা।ইশতেহারে বলা হয়, নির্বাচনে জিতলে সব নাগরিকের কল্যাণে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আমূল পরিবর্তন আনা হবে প্রতিহিংসার রাজনীতি দূরীকরণ, নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও বিকেন্দ্রীকরণ, দুর্নীতি দমন ও সুশাসনসহ ১৪টি খাতে।ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়, তারা ক্ষমতায় এলে পরপর দুই মেয়াদেও বেশি একজন প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না- এমন ব্যবস্থা করবে।এছাড়া চালিয়ে যাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষিত বেকারদের জন্য বেকার ভাতা চালু করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হবে। আমী ৩ বছরে সরকারি চাকরিতে সব শূন্য পদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষিত বয়োবৃদ্ধের জন্য ন্যূনতম ভাতা রেখে অবৈতনিক খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।