কুড়িগ্রামের রমনা-পার্বতীপুর রেলযোগাযোগ রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনাময় পথ হলেও ৯০ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। রেলযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় খুঁড়িয়ে চলছে কুড়িগ্রামের রেলপথ। দেশের আর্ন্ত:নগর ট্রেনগুলোর বর্তমান গতি ঘন্টায় ৭০ কিলোমিটার হলেও রমনা-পার্বতীপুর রুটের ট্রেনের গতি ২৫ কিলোমিটার। সুত্রমতে, ১৯২৮ সালের ২ আগষ্ট কুড়িগ্রামে প্রথম রেলপথ চালু হয়। তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম হয়ে চিলমারী’র রমনা স্টেশন পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৪৩ কিলোমিটার রেলপথ পড়ে কুড়িগ্রাম জেলার ভেতরে। সে সময় যাত্রীদের সুবিধার্থে এই ৪৩ কিলোমিটার রেলপথে স্থাপন করা হয় ৮টি স্টেশন।

সরেজমিন দেখা গেছে, কুড়িগ্রাম স্টেশনের ভবন নির্মাণ কাজ চলমান থাকলেও বাকি ৭টি স্টেশনের অবস্থা একেবারে নাজুক। বেশির ভাগ স্টেশনেই টিকেট কাউন্টার থাকলেও নেই টিকিট মাষ্টার। ট্রেনে নেই কোন চেকার। দীর্ঘ ৯০ বছর পেরিয়ে গেলেও এ পথে রেলযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গ্রহণ করা হয়নি কার্যকর উদ্যোগ। এখনো ব্রিটিশ আমলের বগি দিয়েই চালানো হচ্ছে ট্রেন। তবে বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে এসে স্টেশনগুলো সংস্কার করা হয়। কুড়িগ্রাম পর্যন্ত রেল পথে একটি শার্টল ট্রেন দেয়া হয়।স্থানীয়দের অভিযোগ, অবহেলার কারণেই কুড়িগ্রাম রেলপথ ভালো হচ্ছে না। যুক্ত হচ্ছে না নতুন ট্রেন। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের তাগিদ দিয়েছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, কুড়িগ্রাম রেলপথ চালুর পর পার্বতীপুর-রমনা রেলপথে সকালে ও সন্ধ্যা মিলে ২টি ও লালমনিরহাট-রমনা পথে দুপুরে ও রাতে ২টিসহ মোট ৪টি ট্রেন চালু ছিল। ২০০২ সালের দিকে হটাৎ করে পার্বতীপুর-রমনা রুটে ১টি ও লালমনিরহাট-রমনা রেল পথের দুটি ট্রেনসহ মোট ৩টি ট্রেন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর ফলে কুড়িগ্রাম রেলপথ বি ক্লাস থেকে অবনমন হয়ে ডি ক্লাস হয়। এতে করে মাষ্টার শূণ্য হয়ে পড়ে স্টেশন গুলো। পরে কুড়িগ্রাম বাসীর দাবির পেক্ষিতে বর্তমানে পার্বতীপুর-রমনা রুটের ট্রেনটি সকালে রমনা এসে তিস্তা গিয়ে ফের দুপুরের ট্রেন হয়ে রমনা স্টেশন এসে পার্বতীপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তবে তিস্তা থেকে সন্ধ্যায় কুড়িগ্রাম স্টেশন পর্যন্ত একটি শার্টল ট্রেন যুক্ত করে কুড়িগ্রাম স্টেশনটিকে বি ক্লাস ভুক্ত করা হয়।

রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ণ গণকমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভাপতি নাহিদ হাসান নলেজ ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেসকে বলেন, অবহেলিত অঞ্চলে ট্রেনের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে রমনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ‘ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস’ নামে আন্তনগর ট্রেন দাবি অনেক দিনের। এ নিয়ে আন্দোলন করছে ‘রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি’। তিনি আরো জানান, গণকমিটির দাবির পেক্ষিতে শাটল ট্রেনের মাধ্যমে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে সংযোগ দেয়া হয়। এতে কুড়িগ্রামে জন্য ৪০টি শোভন চেয়ার এবং ১০টি এসি চেয়ার বরাদ্দ রাখা হলেও তা চাহিদার তুলনায় সামান্য।সুত্রমতে, উত্তরের সীমান্ত-ঘেঁষা জেলায় প্রায় ২১ লাখ মানুষ বাস করে। বিপুল এ জনগোষ্ঠীর রেল ও নৌ যোগাযোগ সুবিধা না থাকায় তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসে যাতায়াত করে।সংশ্লিদের মতে, প্রতিদিন কুড়িগ্রাম জেলা থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম রুটে প্রায় ১৩০ টি বাস চলাচল করে। এসব বাসের যাত্রীদের ভাড়া বাবদ বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকা আদায় করছে বাস মালিকরা।

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট রেল বিভাগের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল মোহসী ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেসকে বলেন, সংকট নিরসন হলে যাত্রী সেবার মান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব আরও বাড়বে। পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে রেল ভ্রমণ।