প্রার্থিতা ফিরে পেতে খালেদা জিয়ার করা তিনটি রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।এর ফলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের সুযোগ থাকল না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।বিচারপতি জে বি এম হাসানের একক বেঞ্চ মঙ্গলবার খালেদার আইনজীবীদের আবেদন তিনটি খারিজ করে দেন। এ বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে যে আবেদন তারা করেছিলেন, তাও খারিজ করে দেন বিচারক। খালেদা জিয়ার মনোনয়নের বৈধতা প্রশ্নে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চে বিভক্ত আদেশ হওয়ার পর গত সপ্তাহে এই একক বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

খালেদা জিয়ার মনোনয়নের বৈধতা প্রশ্নে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চে বিভক্ত আদেশ হওয়ার পর বুধবার হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বে একক বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।গত বৃহস্পতিবার সেখানে শুনানি শুরু হলে খালেদার আইনজীবীরা বলেছিলেন, ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে এ বেঞ্চের ওপর তাদের আস্থা নেই। এরপর বিচারক শুনানি মুলতবি রেখেছিলেন।

মঙ্গলবার আবার বিষয়টি বিচারপতি জে বি এম হাসানের বেঞ্চে উঠলে লিখিতভাবে অনাস্থা প্রকাশ করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহামস্মদ আলী।আদালত ওই অনাস্থার আবেদন খারিজ করে রিট আবেদনের ওপর শুনানি শুরু করতে বললে খালেদার আইনজীবী এ জে মোহামস্মদ আলী ও বদরুদ্দোজা বাদল আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।এরপর বিচারক নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী মাহবুবে আলম এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডিএডি মোতাহার হোসেন সাজুর বক্তব্য শুনে বিএনপি চেয়ারপারসনের আবেদন তিনটি খারিজ করে দেন।জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের দণ্ড নিয়ে গত ফেব্র“য়ারি থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তাকে ফেনী-১ এবং বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে প্রার্থী করেছিল বিএনপি।

কিন্তু নভেম্বরের শেষে হাইকোর্টে এক মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিলে ওই দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হয়।এরপর ২ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে দুই বছরের বেশি সাজার কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্রই বাতিল করে দেওয়া হয়। খালেদার আইনজীবীরা ওই সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও বিফল হন। এরপর তারা রিট আবেদন নিয়ে আসেন হাই কোর্টে।কিন্তু বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্রের বৈধতা প্রশ্নে বিভক্ত আদেশ দেয়।

বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ইসিকে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেন। খালেদার মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।অন্যদিকে বিচারপতি মো. ইকবাল কবির এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে খালেদার ভোটের ভাগ্য আটকে যায়।

এরপর নিয়ম অনুযায়ী মামলার নথি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয় এবং তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জে বি এম হাসানকে ওই তিন আবেদন নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেন। কিন্তু সেখানেও খালেদার ভোটের ভাগ্য খুললো না।