ক্ষমতায় এলে চলমান কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করবে না বিএনপি। তবে মেগা প্রকল্পে ব্যয়ের আড়ালে সংগঠিত দুর্নীতি নিরীক্ষা’ করে দেখা হবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না রাখার বিধানের প্রতিশ্র“তি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে বিএনপি।

মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইশতেহার প্রকাশ করে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই ইশতেহার ঘোষণা করেন। সোমবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি দল বিএনপি। ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে থাকা অনেক প্রতিশ্র“তিই বিএনপির ইশতেহারে আছে।ইশতেহার ঘোষণার আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি একটি উন্নত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। দেশের উন্নয়নের জন্য বিএনপির কর্মসূচিগুলো বহুমুখী ও উন্নততর। বিএনপি জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে অঙ্গীকার করতে চায়, ক্ষমতায় গেলে কারো ওপরই কোনো প্রকার প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। একটি প্রতিহিংসামুক্ত এবং সহমর্মী বাংলাদেশ গড়ে তোলাই বিএনপির লক্ষ্য।

ইশতেহারে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হবে, সামরিক বাহিনী ছাড়া শর্তসাপেক্ষে সরকারি চাকরিতে কোনো বয়সসীমা থাকবে না, ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষিত বেকারদের জন্য বেকার-ভাতা চালু করার জন্য রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা নিরিখে একটি কমিশন গঠন করা হবে।এ ছাড়া আরো বলা হয়, একদলীয় শাসনের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করা হবে; বর্তমান বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করা হবে।

জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ১১ শতাংশ উন্নীত করা, রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার তিন গুণ বাড়ানো, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয়। জেএসসি ও পিইসি পরীক্ষা বাতিল করা, ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত তরুণদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ইয়ুথ পার্লামেন্ট গঠন করা, শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করার কথা বলা হয়।এ ছাড়া ইশতেহারে বলা হয়, স্বল্প আয়ের পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্বল্প সুদের শিক্ষা ঋণ চালু করা হবে। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম বছরে বিদ্যুৎ ও আবাসিক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হবে না। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যে সব ধরনের অসংগতি দূর করা হবে।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ঘোষিত বিএনপির ইশতেহারে তরুণ ও যুবকদের আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয় করা, শিক্ষিত তরুণদের চাকরি নিশ্চিত করাসহ তাদের উচ্চশিক্ষার পথ সুগম ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে দলটি। এ ছাড়া পররাষ্ট্রনীতিতে অন্যকোনও দেশের জন্য হুমকি হয় এমন কাজে সুযোগ না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে দলটি। সংবিধান সংশোধন করে নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করারও কথা বলেছে দলটি।

ইশতেহারে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন, বিচার বিভাগ, মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ ১৯ দফা বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইশতেহারে গুরুত্বারোপ করা ১৯ দফার অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, অর্থনীতি, মুক্তিযোদ্ধা, যুব নারী ও শিশু, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান, জ্বালানি, তথ্য ও প্রযুক্তি, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, বৈদেশিক ও প্রবাসী কল্যাণ, কৃষি ও শিল্প, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, প্রতিরক্ষা ও পুলিশ, আবাসন, পেনশন ফান্ড ও রেশনিং ফান্ড প্রতিষ্ঠা, পরিবেশ, পররাষ্ট্র এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।ভিশন ২০৩০’-এর আলোকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার তৈরি করেছে বিএনপি। এগিয়ে যাবো একসাথে, ভোট দেবো ধানের শীষে- স্লোগানকে সামনে রেখে নির্বাচন উপলক্ষে দলটির ইশতেহার তৈরি করা হয়েছে।