পুলিশ বাহিনীর পোশাকের মর্যাদা রক্ষা করে কাজ করার জন্য নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম। তিনি বলেন, ‘কমিশন থেকে বের হয়ে একজন কমিশনার ব্যক্তিগতভাবে নির্দেশ দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। একজন কমিশনারের ব্যক্তিগত বক্তব্যে কমিশন সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।’ বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন। তবে, এই সময় তিনি কোনও কমিশনারের নাম উল্লেখ করেননি।
ইসির মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এইচটি ইমাম বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও নির্বাচনি কর্মকর্তাদের ওপর প্রতিপক্ষের আক্রমণের অভিযোগ জানাতে ইসিতে এসেছি।’প্রসঙ্গত, সকালে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্যে পুলিশ বাহিনীর পোশাকের মর্যাদা রক্ষা করে কাজ করার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি পুলিশ বাহিনীর কাজে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে এইচটি ইমাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন মানে চিফ ইলেকশনারসহ পাঁচ কমিশনার। সবাই মিলে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে যা বিবেচনা করবেন, তা বলবেন। কোনও বিশেষ একজন কমিশনার ভিন্নভাবে কোনও নির্দেশ দিতে পারেন না। তা উচিতও নয়। এটি ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করে।এক প্রশ্নের জবাবে এইচটি ইমাম বলেন, ‘একজন কমিশনারের মন্তব্য দেখে আমরা অবাক হয়ে গেছি। এরকম তো হওয়ার কথা নয়। কমিশন যা কিছু বলবে, কমিশনের নামে তা প্রচারিত হবে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে কমিশন। নির্দেশ দেবে কমিশন। সেক্ষেত্রে কমিশনের পক্ষে কাউকে দায়িত্ব দিলে তিনি বলতে পারেন। কিন্তু কমিশন থেকে বের হয়ে একজন ব্যক্তিগতভাবে নির্দেশ দেবেন, এটি গ্রহণযোগ্য নয়। যেকোনও প্রতিষ্ঠানে চেইন অব কমান্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি একেকজন কমান্ডার একেক ধরনের কমান্ড দেন, তাহলে সবাই বিভ্রান্ত হবেন।এইচ টি ইমাম আরও বলেন, ‘সরকারি দল হিসেবে আমরা অনেক কিছুই বলতে পারি। অনেকের কাছে আমরা নির্দেশও দিতে পারি। কিন্তু তা না করে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে বারবার আসি এজন্য যে, অন্য দলগুলোও যেন এটা করে। কারণ, সবাই মনে করে কমিশনের কাছে বিচার পাবে। আমাদের কাছে কমিশন হচ্ছে ভরসার স্থল। এ বিষয়টি অন্যরা পালন করে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে কেউ কেউ টেবিল চাপড়ে কথা বলেন বা অশোভন উক্তি করেন। এতে আমরাও ছোট হয়ে যাই। কমিশনকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি।এছাড়া, সিইসির সঙ্গে বৈঠকে তারা যান চলাচলে বিধিনিষেধ শিথিল, সাংবাদিকদের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি, প্রার্থী ও দলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের জন্য যান চলাচলের অনুমতি দেওয়ার বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন বলে জানান এইচটি ইমাম। তিনি বলেন, ‘টাকা লেনদেনের অনেক চালানের মধ্যে একটি ধরা পড়েছে। কালো টাকার প্রভাবের বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। নির্বাচনের দিন, অনলাইন মানি ট্রান্সফার বা মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ করার বিষয়ে কমিশনের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি এনজিওর বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার ও ড. সেলিম মাহমুদ প্রমুখ।