কোনও ভয়ভীতির কাছে নতিস্বীকার না করে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, কোনও বাহিনীর নির্লিপ্ততা বা নিষ্ক্রিয়তায় ভোটগ্রহণ ব্যাহত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ সহিংসতা বা নাশকতামূলক অবস্থা সৃষ্টি করলে তা কঠোরভাবে দমন করতে হবে। শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন সিইসি। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, অবৈধভাবে কোনও মহল ভোটকেন্দ্রে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।আগামীকাল দেশব্যাপী সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, নির্বাচনি সামগ্রী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আজ রাতের মধ্যে মালামাল নিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে পৌঁছে যাবেন। ইভিএম আসনগুলোতেও নির্বাচনি সামগ্রী ও জনবল পৌঁছে গেছে।’ তিনি বলেন, নির্বাচনি কর্মকর্তাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটের এলাকায় নির্বাচনি তদন্ত কমিটি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট কর্মরত রয়েছেন।

সিইসি বলেন, এই নির্বাচনে এক হাজার ৮৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মাঠে রয়েছেন। দেশের সব রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় সমগ্র দেশ মুখরিত হয়েছে। মিছিল-সমাবেশ, পথসভা, জনসভা, লংমার্চ, লিফলেট বিতরণ, পোস্টার টাঙানো, জনসংযোগ, ঘরে ঘরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচনি প্রতিযোগিতামূলক আবহ সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী উৎসবমূলক ও আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন বিবেচনায় কেন্দ্রের অবস্থান সবার ওপরে। কারণ, কেন্দ্রগুলোর সাফল্যের ওপর ভর করে গোটা নির্বাচনের সাফল্য নির্ভর করে। কেন্দ্রে নিয়োজিত কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করেন। তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য কেন্দ্রের সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশ সমুন্নত রাখা। পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে প্রিজাইডিং অফিসার নির্বাচনি মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। এ সময় ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘ভোটগ্রহণ শেষে কেন্দ্রে ভোটগণনা করা হবে। কোনও অবস্থাতেই কেন্দ্রের বাইরে ভোট গণনা করা যাবে না। গণনার পরে ফলের তালিকা প্রত্যেক এজেন্টকে সরবরাহ করতে হবে।একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিকের খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে সিইসি বলেন, ‘ওই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে প্রার্থীর এজেন্টদের হয়রানি করা হচ্ছে। এটা কাম্য নয়। কোনও এজেন্টের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি কোনও অভিযোগ না থাকলে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানি করবে না। নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে। প্রার্থীর এজেন্টদের দায়িত্ব অনেক। তারা প্রার্থীর প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা তাদের স্বার্থে কাজ করেন। নির্বাচনের ফল হাতে না পাওয়ার আগে কোনও অবস্থাতে তারা কেন্দ্র ত্যাগ করবেন না। কেউ যদি অবৈধভাবে এজেন্টকে কক্ষ ত্যাগ করতে বলে, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিতে হবে।গণমাধ্যমের উদ্দেশে সিইসি বলেন, সাংবাদিকরা নির্বাচনে বড় দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মাধ্যমে দেশবাসী নির্বাচনের সঠিক চিত্র দেখতে পায়। সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশনকালে নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের স্বাভাবিক কাজ যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।নির্বাচনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টি দিয়ে আপনাদের ওপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব পালন করবেন। কারও কারণে নির্বাচন যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। কারও কারণে কোনও প্রার্থী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তারা যেন ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন। রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের আহ্বান জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, তাদের বারবার অনুরোধ করেছি, তারা যেন নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলেন। ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেন। একে অন্যের প্রতি সম্মান দেখান। নির্বাচনি প্রতিযোগিতা যেন সহিংসতায় পরিণত না হয়। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি, নির্বাচনি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হয়েছে। এগুলো আমাদের কাম্য ছিল না। সহিংসতার কারণে যেখানে ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেখানে নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের সম্মুখে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিচ্ছি।নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আপনারা নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলুন, সহিংস পরিস্থিতি পরিহার করুন। প্রকৃত প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখুন। নির্বাচনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সহায়তা করুন। ভোটারদের অনুরোধ করি, আপনার ভোট অতি মূল্যবান। কোনও রকম প্রলোভন, প্ররোচনা, প্রভাব বা ভয়ভীতির কাছে নতিস্বীকার করবেন না। স্বাধীনভাবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সফলভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে। এ সময় অন্যান্য কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন।