কুড়িগ্রামের ৪টি সংসদীয় আসনে বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন হলেও কোথাও কোথাও জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সকাল ৮টায় সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রার্থীদের এজেন্ট ছাড়াই ভোট গ্রহন শুরু হয়। সকালে শিবরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটার উপস্থিতি অনেক কম।

বেলা সাড়ে ১১টায় কুড়িগ্রাম-২ আসনের অন্তর্গত সদর উপজেলার ভোগডাঙা মডেল কলেজের পুরুষ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহন চলছে। বিশ^াসের খামার গ্রামের আব্দুল আজিজ ভোট দেয়ার পর বলেন, ‘যাক ভোট দিবার চাচি, তাকে দিছি। প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল হাই জানান, কিছুক্ষণ আগে সরকারি দলের কিছু ছেলে জাল ভোট দেয়ার চেষ্টা করলে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় তা ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। তিনি জানান, এই কেন্দ্রে ২ হাজার ৪৭২ ভোটের মধ্যে এ সময়ে ১ হাজার ভোট প্রদান করা হয়েছে। পাশের ভোগডাঙা মডেল কলেজ মহিলা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সাঈদ শাহজামাল জানান, এই কেন্দ্রে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ৬০০ ভোট প্রদান করা হয়েছে। এই কেন্দ্রে মোট ভোট ২ হাজার ৪৪২। এই দুটি কেন্দ্রে ঐক্যফ্রন্ট ও মহাজোটের সমর্থিত প্রার্থীসহ সব প্রার্থীর এজেন্ট ছিলো। তবে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের হামলায় আহত হন ছাত্রলীগ কর্মী সাইদুর। তাকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম-৩ আসনে দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত কর্মীরা নৌকার সমর্থকদের উপর হামলায় রাকিব (৩০) ও রহমত (৪৫) নামে ২জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও উলিপুরের দড়ি কিশোরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিএনপি সর্মথকরা জাল ভোট দিতে গেলে নৌকার প্রার্থীরা প্রতিবাদ করলে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়াও কুড়িগ্রাম-২ আসনে হলোখানা ইউনিয়নের হেমেরকুটি বরকতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জামায়াত ও বিএনপি সমর্থক কর্মীরা মহাজোটের কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।কুড়িগ্রাম-১ আসনের আওতাধীন ভাঙামোড় হাফেজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় লাঙ্গল, নৌকা ও ধানের শীষের এজেন্টদের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহন চলছে। এই অবস্থা দ: ব্যাপারীপাড়া স্কুল এন্ড কলেজেসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের।

অপরদিকে কুড়িগ্রাম-৩ আসনে জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। উলিপুর পৌরসভার নারিকেল বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাইরে ভোট দিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আবুল হোসেন নামের এক ভোটার বলেন, ‘পাঁচ বছর পর একটা ভোট দেই, তাও মাইনষে দিছে। হামরা ভেটাটাও দিবের পাইলোং না।

কুড়িগ্রাম-৪ আসনের অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও ভোট প্রদানের হার অনেক বেশী। এই আসনের সাবেক সাংসদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম হাবীব দুলাল জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের প্রতিবাদে ভোট বর্জন করেছেন। তিনি জানান, জেলা প্রশাসকের কাছে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বেলা ১২টায় চিলমারীর মুদাফুৎ থানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় কেন্দ্রে তেমন ভোটার নেই। তবে প্রিজাইডিং অফিসার জানান, প্রায় ৭০ ভাগ ভোট প্রদান করা হয়েছে। একই অবস্থা চরপাত্রখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। বেলা ৩টার দিকে এই কেন্দ্রে ৯০ ভাগ ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়। কুড়িগ্রামের ৪টি আসনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৪০জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্ধতা করছেন। জেলার মোট ভোটার ১৫লাখ ৪৭হাজার ২জন। এরমধ্যে পুরুষ ৭লাখ ৬১হাজার ১৪৫জন, নারী ৭লাখ ৮৫হাজার ৮৫৭জন। ভোট কেন্দ্র ৬৯৭টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ৩হাজার ২২১জন। গুরুত্ব পূর্ণ ৩৭৭টি কেন্দ্রের মধ্যে চরাঞ্চলেই ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। নির্বাচনে সেনাবহিনীর ৩০০, বিজিবি ৩৮০, র‌্যাব ৫০, পুলিশ ১ হাজার ৭০০, আনসার ৮হাজার ৩৬৪জন সদস্য ও ১১৮টি মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করছে। রিটার্নিং অফিসার ও কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা: সুলতানা পারভীন জানান, শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহন শেষ হয়েছে। কোথাও কোন বড় ধরণের অভিযোগ আসেনি।