একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। অনেক স্থানে সহিংসতা, নাশকতা, কারচুপি, ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।তবে সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ২০ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।সারা দেশে ভোট গ্রহণ শেষে এখন চলছে গনণা। এছাড়া অনেক আসনে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের খবরও পাওয়া গেছে।

নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে একযোগে ভোট গ্রহণ করা হয়। প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট হয়নি। প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থক এবং সাধারণ জনগণও রয়েছেন। ভোটে সরকারবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রায় অর্ধশত প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। দেশের বেশির ভাগ আসনেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেছে। নির্বাচনে সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। এ ছাড়া বিএনপির কর্মী ও সাধারণ ভোটারও নিহত হয়েছেন।

ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর সকালে অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। তবে বেশির ভাগ কেন্দ্রে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের এজেন্ট না থাকার খবর সকাল থেকেই পাওয়া গেছে। অবশ্য সকালে যাঁরা ভোট দিতে গেছেন, তাঁরা ভোট দিতে পেরেছেন। কিন্তু বেশির ভাগ আসনে বেলা ১১টার পর থেকে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে থাকে। কেন্দ্রগুলোতে ক্ষমতাসীনদের আধিপত্য বাড়তে থাকে। সাধারণ ভোটারের উপস্থিতি কেন্দ্রে কমতে থাকে।

এবারের নির্বাচনের দিন সারা দেশে মোট ২০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা ১০ জন। এ ছাড়া একজন বিএনপির ও একজন ইসলামী ছাত্র সেনার নেতা। বিভিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক। যশোরের একজন প্রার্থীর ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে। ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছে। ভোটাররাও ভোট দেওয়া নিয়ে নানা অভিযোগ করেছেন; বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের সামনে সিল দিতে বাধ্য করা, ব্যালট নিয়ে কর্মীদের সিল দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় গত ৮ নভেম্বর। এরপর একবার পুনঃ তফসিল করা হয়। এর ফলে ভোটের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়।

৩৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলত আওয়ামী লীগ ( নৌকা) ও বিএনপির (ধানের শীষ) মধ্যে। ভোটে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিচ্ছে মহাজোটের। ১৪ দলীয় জোটের নেতৃত্বেও আছে দলটি। আর বিএনপি আছে ২০ দলের নেতৃত্বে ও ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক হিসেবে। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জানা যাবে কারা পরবর্তী ৫ বছরের জন্য দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসছে, রাষ্ট্রক্ষমতায় আসছে।

এবারই প্রথমবারের মতো ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট হচ্ছে। ইভিএমে ভোট হবে ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ ও সাতক্ষীরা-২ আসনে। এসব আসনে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। তবে ব্যালটে ভোট হওয়া আসনগুলোর ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। অবশ্য নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা আশা করছেন, রাত ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে পরবর্তী সরকার কারা গঠন করছে, সে সম্পর্কে জানতে পারবে সাধারণ মানুষ।আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বলেছেন, নৌকার জয় হবেই।আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ভিকারুননিসা নূন কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাঁদেরই জয় হবে।আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এবার ভোট ভালোই হয়েছে। ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ৬ লাখ ৮ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, কোস্টগার্ড, বিজিবির সদস্যরা রয়েছেন।

একনজরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন:ভোটকেন্দ্র: ৪০ হাজার ১৮৩টি, ভোটকক্ষ: ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি,মোট ভোটার: ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন, পুরুষ ভোটার: ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন,মহিলা ভোটার: ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন,অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা: ৩৯টি,মোট প্রার্থী: ১ হাজার ৮৬১ জন,রাজনৈতিক দলের প্রার্থী: ১ হাজার ৭৩৩ জন, স্বতন্ত্র প্রার্থী: ১২৮ জন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৬ লাখ ৮ হাজার: ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত ফোর্স সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৮ হাজার। এর মধ্যে পুলিশ প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার, আনসার প্রায় ৪ লাখ ৪৬ হাজার, গ্রাম পুলিশ প্রায় ৪১ হাজার। সেনাবাহিনী (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ৩৮৯টি উপজেলায় ৪১৪ প্লাটুন, নৌবাহিনী ১৮টি উপজেলায় ৪৮ প্লাটুন, কোস্টগার্ড (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ১২টি উপজেলায় ৪২ প্লাটুন, বিজিবি (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ৯৮৩ প্লাটুন, র‌্যাব (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) প্রায় ৬০০ প্লাটুন ভোটের মাঠে নিয়োজিত আছে।

এ ছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা (র‌্যাবসহ) প্রায় ২ হাজার প্লাটুন (প্রায় ৬৫ হাজার)। এ ছাড়া সারা দেশে জেলা ও মেট্রোপলিটনে পুলিশের টহল দল নিয়োজিত রয়েছে।নির্বাচনে নিয়োজিত ১ হাজার ৩২৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য ৬৫২ জন, অবশিষ্ট ৬৭৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোবাইল বা স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে নিয়োজিত রয়েছেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৬৪০ জন, ১২২টি ইলেকট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটিতে ২৪৪ জন।

ভোট গ্রহণ কর্মকর্ত: এবার ভোটে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ৬৬ জন দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক।নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৪০ হাজার ১৮৩ জন, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২ জন এবং পোলিং অফিসার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪ জন।
পর্যবেক্ষক: নির্বাচনে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন।

চট্টগ্রাম ৩: চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কাথারিয়া ইউনিয়নের বরইতলির প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহমেদ কবীর (৪৫) নামে একজন ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোরে স্থানীয় দুই গ্র“পের মধ্যে এই সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। নিহত আহমেদ কবীর কাথারিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাঁশখালী থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, ভোরে ওই কেন্দ্রের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে গুলিবিদ্ধ কবীরকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে পটিয়ায় ভোটকেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আবু সাদেক (১৮) নামের একজন নিহত ও দুই জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ওই উপজেলার জিরি ইউনিয়নের দক্ষিণ মালিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পটিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহত আবু সাদেক দক্ষিণ মালিয়ারা এলাকার আবুল কাশেম মেম্বারের ছেলে। আহতরা হলেন মো. মুন্না (২৮) ও মো. ইলিয়াস (৪০)।
সহকারী পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন বলেন, ভোটকেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে ধানের শীষ ও নৌকার প্রার্থীরা সংঘর্ষে জড়ান। দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে আবু সাদেক নিহত হন। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ওই কেন্দ্রে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় এক ঘণ্টার মতো ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর দুপুর ১২টার দিকে ফের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বর্তমানে ওই কেন্দ্রের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে ও বর্তমানে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে।

এর আগে চট্টগ্রাম-১২ আসনের পটিয়া এলাকায় দ্বীন মোহাম্মদ (৩৫) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে পটিয়া উপজেলার কুসুমপুর ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ জানায়, নিহত দ্বীন মোহাম্মদ যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি স্থানীয় মৃত ইউসুফ কমান্ডারের ছেলে। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

কুমিল্লা: কুমিল্লার নাঙলকোট ও চান্দিনায় নির্বাচনি সহিংসতায় দুই জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আজ রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোট শুরুর পর এই ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নাঙলকোটে মুরগাও ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পথে বাচ্চু মিয়া (৪৫) নামে এক ভোটারকে মারধর করে কিছু দুর্বৃত্ত। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। স্থানীয়রা জানান, তিনি বিএনপি সমর্থক। তার বাবার নাম ইদরিস মিয়া। বাড়ি নাঙলকোটের সুন্দাইল গ্রামে। তিনি পেশায় বর্গা চাষি।এদিকে চান্দিনায় পশ্চিম বেলাসার সরকারি প্রাথমিক কেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। পশ্চিম বেলাসারের প্রিজাইডিং অফিসার হুমায়ুন কবির দাবি করেন, কেন্দ্র থেকে ভোটের বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়। নিহত ব্যক্তির নাম মুজিব (৩৫)। তার বাবার নাম সুজাদ আলী। চান্দিনা থানার ওসি আবু ফয়সাল তার নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।

রাজশাহী: রাজশাহী-৩ আসনের মনপুর উপজেলায় বাকুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মেরাজ আলী (৩২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, নিহত মেরাজ আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। তবে বিএনপির দাবি, মেরাজ তাদের দলীয় কর্মী ছিল। নিহত মেরাজ আলী জাহানাবাদ ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে। জানা গেছে, বাকুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় প্রতিপক্ষের হাসুয়ার আঘাতে মেরাজ ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের গোপালপুরে হাজী আব্দুল আজিজ (৬৫) নামের এক বিএনপি নেতার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের বাইশখাইল এলাকা থেকে তার লাশটি উদ্ধার করা হয়। আব্দুল আজিজ ওই এলাকার ওয়ার্ড বিএনপি’র সহ-সভাপতি বলে জানা গেছে।স্থানীয়রা জানান, রবিবার সকালে স্থানীয় লোকজন নগদা শিমলা বাইশখাইল এলাকায় আব্দুল আজিজের লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে তার লাশটি উদ্ধার করে। জেলা বিএনপির সভাপতি ও এই আসনের প্রার্থী সুলতাল সালাউদ্দিন টুকুর বড় ভাই কৃষিবিদ শামছুল আলম তোফা অভিযোগ করেন, সকালে ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল আজিজ ভোটার লিস্ট নিয়ে কেন্দ্রে যাওয়ার সময় নৌকার সমর্থকরা তাকে হত্যা করে লাশ ধানক্ষেতে ফেলে রাখে। এঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজার: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের সংঘর্ষে এক যুবলীগকর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম আবদুল্লাহ আল ফারুক (২৫)। তিনি রাজাক আলী গ্রামের আবুল কালামের ছেলে।কক্সবাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাতবরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থকদের হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। এ সময় তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। পেকুয়া থানার ওসি জাকের হোসেন ভূঁইয়া জানান, তিনি ঘটনা জানতে পেরে ওই এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। তবে এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনও মামলা হয়নি।

রাঙামাটি : রাঙামাটি জেলোর কাউখালি উপজেলায় ঘাগড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বাছির উদ্দিন (৩৫) নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন ১০ জন। রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোটগ্রহণের আগে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কাউখালি উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয়রা জানান, রবিবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর আগে ইউনিয়নের রাঙ্গিপাড়া এলাকায় নৌকা ও ধানের শীষের দু’দল সমর্থকের মধ্যে হঠাৎ সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় বাছির উদ্দীনসহ উভয়পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হন। আহতের মধ্যে গুরুতর বাছির উদ্দীনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসব তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহতদের কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মঞ্জুর আলম বলেন, ভোটগ্রহণের আগে দু’দলের সংঘর্ষে চট্টগ্রামে নেওয়ার পথে এক যুবলীগের নেতার মৃত্যু হয়েছে।

নরসিংদী: নরসিংদী-৩ আসনের শিবপুরে মো. মিলন মিয়া (৪৫) নামে আওয়ামী লীগের এক নির্বাচনি এজেন্টকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে নরসীংদী-৩ শিবপুর কুন্দারপাড়া কেন্দ্রে অদূরে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিবপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানান, ‘রবিবার দুপুর ১২টার দিকে নরসীংদী-৩ শিবপুর কুন্দারপাড়ার ভোট কেন্দ্রের অদূরে গ-গোল দেখা দিলে পুলিশ সেখানে গিয়ে মো. মিলন মিয়ার (৪৫) গলাকাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখে। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তদন্ত করা হচ্ছে।’

নাটোর: নাটোরে ধানের শীষে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাকবিত-ায় ভাতিজার হাতে চাচা খুন হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহতের নাম হোসেন আলি (৫০) এবং তার ভাতিজার নাম রতন (৩০)। রবিবার সকালে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার সমসখলসী গ্রামে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নলডাঙ্গা থানার ওসি সফিকুর রহমান।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভাতিজা বউ ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় চাচা হোসেন আলি তাকে বকাঝকা করেন। এ নিয়ে তার ভাতিজার বউ প্রতিবাদ করলে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। এসময় রতন এসে স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে চাচার সঙ্গে বাকবিতন্ডা শুরু করে। এর এক পর্যায়ে রতন ধারালো অস্ত্র দিয়ে চাচা রতনকে আঘাত করে। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত হোসেন আলি বিপ্র বেলঘরিয়া ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য বলে নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসাদ্দেকুল ইসলাম বাদশা।

বগুড়া: বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের বাগইল গ্রামে আজিজুল ইসলাম (৩০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত এবং নাজমুল হুদা ডুয়েল নামে এক ইউপি সদস্য আহত হয়েছেন। বগুড়ার কাহালু থানার ওসি শওকত কবির ও পাইকড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিঠু চৌধুরী এই খবর নিশ্চিত করেছেন। ধানের শীষের কর্মীদের হামলায় হতাহতের এই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

নোয়াখালী:নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের তুলারাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে কর্তব্যরত আনসার সদস্য নুরন্নবী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। জেলা পুলিশ সুপার ইলয়াস শরিফ একথা জানান। রবিবার ভোট চলার সময় এ ঘটনা ঘটেছে।

গাজীপুর: গাজীপুর মহানগরের কাজী আজিমউদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক ভিপি লিয়াকত হোসেনকে (৪০) কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে মহানগরির হাড়িনাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানার ওসি সমীর সূত্র ধর জানান, ‘হামলার ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। কারা তার ওপর হামলা করেছে তা তদন্ত করে দেখা হবে।’ লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

লালমনিরহাট: লালমনিরহাট-৩ আসনের (সদর) রাজপুর ইউনিয়নের পাগলারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার পথে তোজাম্মেল হোসেন (৬০) নামে এক ব্যক্তি দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন।২ নং ইউনিয়নের সদস্য শাহজাহান আলী জানান, দুপুর ১টার দিকে তোজামম্মেল হোসেনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর বিকাল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে মারা যান তিনি। পেশায় দিনমজুর তোজাম্মেল ২ নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা। তার চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রয়েছে।ইউপি সদস্য শাহজাহান আলীর দাবি, ভোটকেন্দ্রে যেতে মানা করার পরও তোজাম্মেল হোসেন যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়।

লালমনিরহাট-৩ আসনের (সদর) রাজপুর ইউনিয়নের পাগলারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার পথে তোজাম্মেল হোসেন (৬০) নামে এক ব্যক্তি দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন।২ নং ইউনিয়নের সদস্য শাহজাহান আলী জানান, দুপুর ১টার দিকে তোজামম্মেল হোসেনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর বিকাল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে মারা যান তিনি। পেশায় দিনমজুর তোজাম্মেল ২ নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা। তার চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রয়েছে।ইউপি সদস্য শাহজাহান আলীর দাবি, ভোটকেন্দ্রে যেতে মানা করার পরও তোজাম্মেল হোসেন যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়।