দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী এজেন্টদের বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। রোববার সকাল ৮টায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে নিজের ভোট দেন ড. কামাল। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ অভিযোগ করেন।

ড. কামাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে লেখা আছে, দেশের মালিক জনগণ। তারা ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। এটা মনে রাখতে হবে, দেশের মালিকদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা মানে স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করার শামিল।সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছেন, নিজের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে ভোট দেওয়া দরকার। কারণ, জনগণ এখন বুঝতে পেরেছে তারা রাষ্ট্রের মালিক। সেই জন্য নিজের প্রতিনিধি নির্বাচন করছে। যাতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ভোটের সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘প্রতিমুহূর্তে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসছে, আমাদের প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমরা জায়গায় জায়গায় এজেন্টদের বের করে দেওয়ার বা ভোট দিতে না দেওয়ার যে সংবাদগুলো পচ্ছি, তা দুঃখজনক, উদ্বেগজনক।এটা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বেইমানি, শহীদদের সঙ্গে বেইমানি, তাজউদ্দীনের সঙ্গে বেইমানি, নজরুল ইসলামের সঙ্গে বেইমানি। স্বাধীনতার যুদ্ধে আমাদের অনেক পুলিশ জীবন দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে বেইমানি।

ড. কামাল হোসেন আরো বলেন,কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়ার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাব। যাতে এর সুষ্ঠু বিচার হয়। সবাই সমান সুযোগ পায়।

নিজের কেন্দ্রে এজেন্ট আছে কি না জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, এ কেন্দ্রে আছে। তবে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে, এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছে। এটা সবচেয়ে বড় অপরাধ। যত ধরনের অপরাধ আছে, তার মধ্যে এটা সবচেয়ে বড় অপরাধ। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া মানে হলো ১৯৭১ সালের শহীদদের সঙ্গে বেইমানি। শহীদরা জীবন দিয়েছেন, যাতে আমরা ভোট দিতে পারি।জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী জানতে চাইলে কামাল বলেন, আমরা সব সময়ে জয়ের বিশ্বাস করি। আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। ভোটের ফল মেনে নেবেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ফলাফল হোক, পরে দেখা যাবে।এদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমরা শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবো। রোববার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে গণফোরামের কার্যালয়ে আয়োজিত নির্বাচনি পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন আমি। সারাদেশ থেকে এখনও পর্যন্ত যতগুলো খবর পেয়েছি একজনও বলেনি যে, তার এলাকায় সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। আমি আশা করেছিলাম যে, ৩০-৪০ জন প্রার্থীর কল এসেছে। তাদের মধ্য থেকে অন্তত একজন হলেও বলবে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, এই সুখবরটি আপনাকে দিলাম। কিন্তু কেউই বলেনি যে, তার এলাকায় সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচন নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

শেষ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের মাঠে থাকবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, আমরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবো। তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর ভোটের এই চিত্র দেখবো আশা করিনি। ভোটের মাঠে যে আনন্দ-উল্লাস করার দরকার ছিল, সেটি আমরা পাচ্ছি না।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা-৭ আসনের প্রার্থী মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, আমরা ভোটের যুদ্ধ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছি। গতকাল (শনিবার) খবর পেয়েছিলাম, রাত ৩-৪টার মধ্যে নৌকার পক্ষে ৩০-৪০ শতাংশ ভোট কেটে নেওয়া হবে। কিন্তু আমরা এটাকে বিশ্বাস করতে চাইনি। মনে করেছিলাম— অবান্তর কথা। কিন্তু সকালে আমাদের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের পুলিশের সহায়তায় মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ পাশে দাঁড়ানো থাকলেও কিছু বলেনি। এখন কোনও কেন্দ্রে আমার পোলিং এজেন্ট পাবেন না।

মন্টু বলেন, একটি কেন্দ্রে আমার পাঁচ জন মহিলা পোলিং এজেন্ট ছিলেন। তাদেরকে মারধর করার পরও কিছুক্ষণ থাকেন তারা। এরপর তাদেরকে যখন বের কের দেওয়া হয়, তারা র‌্যাবের কাছে সহযোগিতা চান। র‌্যাব তাদের ভোটকেন্দ্রে না নিয়ে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। এক বিভীষিকাময় নির্বাচন অতিক্রম করছি আমরা। আমরা অসহায় জনগণের কাছে ক্ষমা চাই।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা-৬ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমার এলাকায় নির্বাচনের পরিবেশ ভয়াবহ। লাঠিয়াল বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আমার পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। কিছু কিছু প্রিজাইডিং অফিসার পোলিং এজেন্টদের নিয়োগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এই আসনে যেসব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে— আমরা ভেবেছিলাম সেখানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তা পরিচালিত হবে, ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে। কিন্তু ভোটারদের কাউকে কাউকে ইভিএম কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কোনও কোনও ভোটার ইভিএম মেশিনের সামনে পৌঁছাতে পারলেও মেশিন ওপেন হওয়ার পর লাঠিয়াল বাহিনী তাদের বের করে দিয়েছে। বলেছে, আপানাদের আর কষ্ট করতে হবে না। বিভিন্ন কেন্দ্রে বলা হচ্ছে এখানে শুধু একটি প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট থাকবে, সেটি হচ্ছে নৌকা। অন্য কোনও প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট থাকতে পারবে না বলে সবাইকে বের করে দেওয়া হয়েছে।